শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী মারাত্মক ভোগান্তিতে

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রী পারাপারের অন্যতম মাধ্যম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথ নাব্যতা সঙ্কট কাটছে না। আজ বুধবারও এ পথে পদ্মা নদীর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে চলতে গিয়ে একাধিক ফেরি আটকে যায়। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সকাল থেকে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়। উজান থেকে আসা পলি অস্বাভাবিকহারে এ নৌপথে জমায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাতটি ড্রেজার দিয়েও এ পলি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া পদ্মা নদীতে তীব্র ¯্রােতও রয়েছে। এক দিকে নাব্যতা সঙ্কট, অন্য দিকে তীব্র ¯্রােত এ দুই কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের ছুটির পর কর্মস্থল ঢাকা ফেরায় যাত্রী পারাপারে বিঘœ ঘটছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নাব্যতা সংকটের কারণে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে আটকে আছে ৫ শতাধিক যানবাহন। এর মধ্যে বেশির ভাগই প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। ঢাকার উদ্দেশে যাত্রীদের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঈদের দুই সপ্তাহ আগে নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করে। এতে করে ফেরি মাঝ নদীতে আটকে পড়ছে। ফেরিগুলো তার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে কোনোমতে চলছে। নদীর তলদেশের বালু ঘেঁষে চলছে ফেরিগুলো। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর মাঝে আটকে থাকছে। প্রথমদিকে সকল ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে শুধু ছোট ফেরি চলাচল শুরু করে। বুধবার সকালে সরেজমিনে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় গেলে যাত্রীরা ফেরি না পাওয়ার কষ্ট আর পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যেতে পারার নতুন অনুভূতির কথা বলেন। ঘাটে আটকেপড়া যাত্রীরা জানান, ঈদের দুই সপ্তাহ আগে নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করে। প্রথমদিকে সকল ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল থেকে ৫-৬টি ছোট ও মাঝারি ফেরি নদীর তলদেশ ঘেঁষে ধারণ ক্ষমতার হালকা যানবাহন নিয়ে কোনোমতে চলছে। নাব্যতা সংকট ফিরিয়ে আনতে খনন কাজ চালিয়ে ঈদের ৩-৪ দিন আগে সকল ফেরি চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ঈদের পর ফের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের চ্যানেল মুখে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এর কারণে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীকে। পদ্মা উত্তাল তাই লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কষ্ট হলেও ফেরিতে যেতেই অপেক্ষা করছে সবাই। খননকাজ চালিয়ে ফেরি চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক রাখলেও ঢাকামুখী যানবাহন ও যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ এখন চরমে। মস্তফাপুর থেকে আসা যাত্রী মো: মিদুল সরদার জানান, ‘নিজ গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ফিরে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে। যাত্রীদের চাপে ফেরিতে কোনো পরিবহনই উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই সাধারণ যাত্রী হয়ে ফেরিতে চলে যাচ্ছি। আর ফেরিতে বসা তো দূরের কথা দাঁড়োনের মতো সামান্য একটু জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই।’ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ ২ শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে ও ১৭টি ফেরির মধ্যে বেশির ভাগ ফেরিই বন্ধ রয়েছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থা আবদুস সালাম মিয়া জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ও বিকল্প চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে গত দুই সপ্তাহ ধরে ফেরি চলাচল বিঘœ হচ্ছে। তাই রোববার দুপুর থেকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট থেকে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি-পালেরচর হয়ে যাত্রা শুরু করে বেশ কয়েকটি ফেরি। শাহপরানসহ দুটি রো রো ফেরি এবং পাঁচটি ডাম্প ফেরি চালু করা হয়। পদ্মা সেতুর স্প্যানের নিচ দিয়ে গিয়ে শিমুলিয়া থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভাটিতে মূল পদ্মায় গিয়ে পৌঁছে। সেখান থেকে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া প্রান্তে পৌঁছে ফেরিগুলো। এতে ফেরি গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রায় তিনগুণ সময় লাগে। আগে কাঁঠালবাড়ি থেকে শিমুলিয়া পৌঁছাতে যেখানে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। সেখানে নতুন ওই বিকল্প নৌ-পথে সময় লাগছে প্রায় তিন থেকে সোয়া তিন ঘণ্টা। এতে করে যাত্রীদের অনেক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ও বিকল্প চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে গত দুই সপ্তাহ ধরে ফেরি চলাচল বিঘœ হচ্ছে। পর্যাপ্ত গাড়ি না নিয়ে আন্ডারলোডে চলাচল করছে। তারা আরো জানান, নদীতে ¯্রােতও বেড়েছে। অনেক ফেরি একেবারে পুরনো হওয়ায় সেগুলোর ইঞ্জিন সক্ষমতা কম। তীব্র ¯্রােত ও ডুবোচরে আটকে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় এসব ফেরি ধীরে চলছে। এতে পারাপারে বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। নদীর দুই পারে যানজট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি সরাসরি নৌপথে ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। কিন্তু বিকল্প লৌহজং চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এতে দূরত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এ চ্যানেলে ¯্রােতের গতিবেগ ৭-৮ নটিক্যাল মাইল বা ১৫ কিলোমিটার। তীব্র ¯্রােতে ড্রেজার ও ড্রেজারের সাথে থাকা পাইপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের বড় আকারের (৩২ ইঞ্চি ডায়াগ্রামের) ড্রেজার মেশিন দিয়ে খননের উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। তবে খনন কাজের দর নিয়ে সমঝোতা না হওয়া বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ড্রেজার দিয়েই খননকাজ চলছে। উল্লেখ্য, কুরবানি ঈদের দুই সপ্তাহ আগে নাব্য সংকট চরম আকার ধারণ করে। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর কারণে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীকে। পদ্মা উত্তাল পারাপারে তাই লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঢাকামুখী যানবাহন ও যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ এখন চরমে।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।