রাখাইনে মানবিক সহায়তা চাইছে মিয়ানমার

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক র্রিপোট:রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা, পুনর্বাসন ও উন্নয়নের জন্য সবার কাছে অনুদান চাইছে মিয়ানমার। ঢাকা ও দিল্লিতে অবস্থিত মিয়ানমার দূতাবাসের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনুদান আকারে এই অর্থ চাইছে দেশটি। মার্কিন ডলার বা মিয়ানমারের কিয়াতে অনুদানের অর্থ জমা দেয়ার জন্য নেইপিডোতে অবস্থিত একটি ব্যাংকের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ‘রাখাইন ইস্যু সুরাহায়’ অনুদান চাওয়া হয়েছে। এতে যে কোনো অংকের অনুদানকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

মিয়ানমার সরকারের পক্ষে রাখাইনের মানবিক সহায়তা, পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ অনুদানের অর্থ সংগ্রহ করছে। ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ মিয়ানমারের একটি পাবলিক-প্রাইভেট কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারাপারসন হলেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ও রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি। মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আই প্রতিষ্ঠানের ভাইস-চেয়ার। আর সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন দেশটির শান্তি কমিশনের সদস্য ড. অং তুন থাট।

সরকারি ও বেসরকারি খাতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সমন্বিতভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ গঠন করা হয়েছে। এটি সরকারি তহবিল এবং জাতিসঙ্ঘ, বিদেশী রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থিত দাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অনুদানে পরিচালিত হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সাথে গত নভেম্বরে চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ। এই চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দফায় দফায় মিয়ানমারের নানাবিধ শর্তের বেড়াজালে নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পরও বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি।

চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যাবাসন শেষ হওয়াতো দূরের কথা, মিয়ানমারের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে শুরুর সময়সীমাও নির্ধারন করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে আসছে মিয়ানমার। প্রতিবেশী দেশটি এমন কথাও বলছে, আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার জন্যই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল গত ৯ থেকে ১১ আগস্ট মিয়ানমার সফর করেছে। এ সময় প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের একাধিক মন্ত্রীর সাথে বৈঠক এবং রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দেশটির প্রস্তুতি পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আবুল কালামসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গঠিত যৌথ কার্যকরী কমিটির (জেডাব্লিউজে) সদস্যরাও ছিলেন।

বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, প্রত্যাবাসন চুক্তি সইয়ের পর দশ মাসেও এর প্রধান কোনো শর্ত মিয়ানমার বাস্তবায়ন করেনি। চুক্তিতে পরিস্কারভাবে বলা আছে, রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসিত হবে তাদের নিজেদের গ্রামে। সম্ভব হলে নিজ বাড়িতে। কোনো কারণে এটি সম্ভব না হলে তাদের নিজ গ্রামের কাছাকাছি কোনো জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার মোটাদাগে শুধু দুটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করেছে।

জেডাবিøউজির সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মনে করে রোহিঙ্গা নামে কোনো সম্প্রদায় নাই। উত্তর রাখাইনে রয়েছে বাঙ্গালী। তারা বাংলাদেশ থেকে এসে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করেছে। এ সব বাঙ্গালী চরমপন্থী। তাদের ওপর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকান্ডের কোনো সত্যতা নেই। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়াকে আসতে দিয়ে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা রকম গল্প বানাতে সহায়তা দিচ্ছে। মুসলিম বলেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

হেলিকপ্টারে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ঘুরে উত্তর রাখাইনে এক সময় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলো দেখেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়ে গেছে। গাছগুলোর পাতাও জ্বলে গেছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, রোহিঙ্গারা দুঘর্টনাবসত আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যা বললেন ডিবির হারুন

ভুয়া সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।