আমি অসুস্থ, বারবার আসতে পারব না: আদালতে খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা র্রিপোট: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদালতকে তার শারীরিক দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন। সেই সাথে শুনানিতে বার বার উপস্থিত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব না বলেও জানান তিনি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আজ বুধবার সকালে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বসা ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো: আখতারুজ্জামানের আদালতকে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘আমি গুরুতর অসুস্থ। আমার বাম হাত প্যারালাইজড, ডান পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা, হাঁটতে পারি না। তাই এখানে বার বার আসতে পারব না। আপনারা যত দিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এখানে ন্যায়বিচার হয়নি, সরকারের ইচ্ছায় বিচার হচ্ছে। আমি এখানে ন্যায়বিচার পাবো না। গত রাতে এ আদালতের গ্যাজেট হয়েছে। আমার আইনজীবীরা আসতে পারেনি।’

এর আগে সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে আদালত বসেন। খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করা হয়। তখন তার পরনে ছিল একটি বেগুনি রঙের শাড়ি। আর তার হাত-পা একটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।

আদালতে দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।

আর সেখানে উপস্থিত ঢাকা বারের সভাপতি গোলাম মোস্তফা খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় প্রার্থনা করলে আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।

শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তখনো তিনি তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলে জানান। এ সময় তার শরীর কাঁপছিল। আদালতে উপস্থিতকালীন সময়ও তার শরীর কাঁপতে দেখা যায়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কারা অভ্যন্তরে আদালত বসা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। তবে একে ‘আইন পরিপন্থী’ বলেছেন খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার আইনজীবীরা।

গেজেটে বলা হয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ-সংক্রান্ত কার্যক্রম ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। এসব মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালীন এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষটিকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার পর থেকে তিনি অন্য কোনো মামলায় আর হাজিরা দেননি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে। এই পরিস্থিতিতে আদালতকেই কারাগারে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মঙ্গলবার গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যে আদালত দণ্ড দিয়েছেন, সেখানে আরও একটি মামলা শেষ পর্যায়ে আছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন নির্ধারণ করেন।

এই মামলায় এখন কেবল খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বাকি।

000————–00000000000000নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ভেতরে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস বসিয়ে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার বিচারের ব্যবস্থা করায় অসন্তোষ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এই আদালত চলতে পারে না।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে নতুন এ এজলাসে বিচার কার্যক্রম শুরুর পর খালেদা জিয়া নিজের অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বিচারককে বলেন, আপনার যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আমি এ অবস্থায় আসতে পারব না। এ আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না।

আধা ঘণ্টারও কম সময় আদালতের কার্যক্রম চলার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা না থাকায় শুনানি মুলতবি করে আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ঠিক করে দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।

আদালতকে খালেদা জিয়া বলেন, এখানে বিচার পাওয়া যাবে না। তাকে জেলে রাখতেই এ আয়োজন করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তারা আইনজীবীদের আসতে দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নতির মামলার শুনানি এতদিন চলছিল কারাগারের কয়েকশ গজ দূরে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদপ্তরের মাঠে বিশেষ এজলাসে।

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত ঘোষণা করে সেখানেই দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি করার নির্দেশ দেয়।

এ কারাগারেই আরেকটি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে গত সাত মাস ধরে বন্দি রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি একই বিচারক তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।