ডিবি কার্যালয়ে ১২ ছাত্রকে অন্যায়ভাবে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ,ডিবি পুলিশের অস্বীকার

ক্রাইমর্বাতা র্রিপোট:   ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ১২ জন ছাত্রকে ৪ দিন ধরে অন্যায়ভাবে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ তাদের আটক বা গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করা হচ্ছে না। এমনকি তাদের আদালতেও সোপর্দ করা হচ্ছে না।

রোববার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে ওইসব ছাত্রের অভিভাবকরা।

সংবাদ সস্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাইফুল্লাহ বিন মনসুরের বাবা মানসুর রহমান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- জহিরুল ইসলাম হাসিবের বাবা এনামুল হক, রায়হানুল আবেদীনের বাবা রফিক উদ্দিন এবং ইফতেখার আলমের বড় ভাই রাশেদ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে তেজগাঁও-মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমাদের সন্তানসহ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ডিবি কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়া হলেও আমাদের সন্তান আল আমিন, জহিরুল ইসলাম হাসিব, মুজাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, ইফতেখার আলম, সাইফুল্লাহ বিন মনসুর, গাজী মো. বোরহান উদ্দিন, তারেক আজিজ, মাহফুজ, রায়হানুল আবেদীন, ইফতেখার আলম এবং মেহেদী হাসান রাজিবকে এখনও আটক রাখা হয়েছে।

অভিভাবকরা বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ৭ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে হাজির করা হবে। কিন্তু চারদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা কখনও আশ্বাস দিচ্ছেন, আবার কখনও গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করছেন। যাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমাদের সন্তানদের ডিবি কার্যালয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে আমাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সন্তানদের গ্রেফতারের কথা অস্বীকার, তাদের সঙ্গে দেখা করতে না দেয়া প্রচলিত আইনে বেআইনি। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এখন অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে ভীষণভাবে শংকিত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে সন্তানদের নিরাপত্তা দাবি করেন অভিভাবকরা।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, দ্রুত আদালতে উপস্থাপন করার জন্য অভিভাবকরা আকুল আবেদন জানান।

তারা বলেন, আটকদেরকে নিয়ে যেন নাটক সাজানো না হয়। আটককৃতরা যদি সত্যিই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক। আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকারকে আমাদের সন্তানদের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ করা হয়।

অভিভাবকরা বলেন, যদি সরকার আমাদের সন্তানদের নিয়ে কোনো নাটক সাজানোর চেষ্টা করে তাহলে আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে আমাদের অভিযোগ পেশ করতে বাধ্য হবো।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অন্যায়ভাবে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা ছাত্রদের মধ্যে আল আমিন এবং জুলি ইসরাম হাসিন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু। মুজাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জাহাঙ্গীর আলম সরকারি তিতুমীর কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সাইফুল্লাহ বিন মনসুর সরকারি সাদাত কলেজ থেকে অনার্স ফল প্রত্যাশী। গাজী মো. বোরহান উদ্দিন মিরপুর সাইক ইন্সটিটিউট থেকে বিএসসি পাশ করেছেন। তারেক আজিজ ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ম্যাকানিক্যাল ৫ম পর্বের, মাহফুজ একই প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার তৃতীয় পর্বের, রায়হানুল আবেদীন সিভিল সপ্তম পর্বে, ইফতেখার আলম ক্যামিকেল অষ্টম পর্বের ও মেহেদী হাসার রাজিব আটোমোবাইল ৫ম পর্বের ছাত্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান  বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। ৫ সেপ্টেম্বর বা ৭ সেপ্টেম্বর আমরা কাউকে গ্রেফতার করিনি। যারা পেশাদার অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতারে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। এ ধরণের অভিযান এখনও অব্যাহত আছে।

Check Also

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আজ প্রশ্ন উঠছে গণতন্ত্র কোথায়: মঈন খান

ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের রুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে ও তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।