খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে কি ছিল

ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তাকে উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছে। রোববার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরী প্রতিবেদনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যলয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুনের কাছে জমা দেন। গত শনিবার পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড নাজিমউদ্দিন রোডে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং রোববার সকালে বোর্ডের সদস্যরা আলোচনা শেষে তৈরি করা প্রতিবেদনটি জমা দেন।

উল্লেখ গত শনিবার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা কারাগারে যান বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে। গতকাল রোববার ১২টার দিকে প্রতিবেদনটি জমা দেয়ার পর অধ্যাপক জলিল চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কী করণীয় তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তার কি কি রোগ রয়েছে এবং কোথায় চিকিৎসা হওয়া দরকার সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিকিৎসকেরা প্রতিবেদনে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপুর্ণ নয়। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ তারা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে চিকিৎসকেরা বলেন, চিকিৎসকেরা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কিছু চিকিৎসা দিয়েছেন। তার শারীরিক কোনো ঝূঁকি নেই। তবে মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে বিএসএমএমইউ-এ ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন।

‘বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই বলছেন। ঝুঁকি যদি না থাকবে তাহলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড পরামর্শ দিল কেন ?’ প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, এটা একটি বিশ^বিদ্যালয়। এখানে সকল ডিসিপ্লিনের চিকিৎসা হয়। এখানে ভর্তি করা হলে তিনি একটি উন্নতমানের চিকিৎসা পাবেন। এ কারণেই মেডিক্যাল বোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন।’

একই প্রশ্ন মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরীকে করা হলে তিনি জানান, ‘স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই এমন কথা আমরা বলিনি। আমরা বলেছি মৃত্যু ঝুঁকি নেই। তিনি একজন বয়স্ক মানুষ। তার অনেকগুলো রোগ রয়েছে। আথ্রাইটিস এর মধ্যে অন্যতম। তার পায়ে রড লাগানো আছে। বাম হাতে কিছু ধরতে পারেন না। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা রয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছি।’ তিনি আরো জানান, ‘বাসায় রেখে যে চিকিৎসাটা করা যায় না তা হাসপাতালে করা সম্ভব। কারণ হাসপাতালে সব ধরনের মেশিন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের চিকিৎসা হয়। তিনি এখানে ভর্তি হলে একটি পুর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাবেন এবং আরাম বোধ করবেন।’

বেগম খালেদা জিয়ার রয়েছে বহুবিধ রোগ। একজন বয়স্ক মানুষের যত ধরনের রোগ থাকে তার প্রায় সবই রয়েছে। তার রয়েছে ডায়াবেটিস. উচ্চ রক্ত চাপ, চোখের সমস্যা। দীর্ঘদিন থেকে তিনি আথ্রাইটিসের রোগী। তার পায়ে রড লাগানো হয়েছে। স্বাভাবিক চলাফেরা তিনি করতে পারেন না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একজন বয়স্ক মানুষ হিসেবে তিনি বিশেষ যতœ পাওয়ার অধিকারী। ইদানীং তার বাম হাতটি নিজে থেকে নড়াচড়া করতে পারছেন না অন্যের সহায়তা ছাড়া। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি পাশ বদলও করতে পারেন না।

তার রয়েছে ব্যবসায়িক সমস্যা। কারাগারে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারটা মানবিক দিক থেকে দেখতে হবে। তিনি বর্তমানে আছেন নি:সঙ্গ পরিবেশে। এমন পরিবেশে যে কেউ যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। উচ্চ ঝুঁকির একজন রোগী হিসেবে তাঁর অসুস্থতা লাঘব হচ্ছে না বলে আদালচ চত্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আরো পড়ুন : খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ মেডিকেল বোর্ডের
নয়া দিগন্ত অনলাইন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:১৫

বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গঠিত মেডিকেল বোর্ড।

বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল হারুন আজ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। তিনি বলেন, কয়েকটি সুপারিশসহ মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘পূর্বে যে সমস্ত রোগ উনার (খালেদা জিয়া) ছিল, সেই রোগগুলোই পেয়েছেন। আর উনার শারীরিক অবস্থা এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ নয় এবং উনারা (মেডিকেল বোর্ড) উনাকে আরো সুচিকিৎসার জন্য অন্য একটা হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য অ্যাডভাইস করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কেই রেফারেল হসপিটাল হিসেবে উনারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।’

অধ্যাপক হারুন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ হলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। তবে এই অসুস্থতা কারাগারে থাকার কারণে নয়। কারাবন্দী হওয়ার আগে থেকে খালেদা জিয়ার বেশ কিছু সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর নয়।

বিএসএমএমইউয়ের এই পরিচালক বলেন, বোর্ড সুপারিশ করেছে, যে হাসপাতালে সব রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, সেখানে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করাতে। তারা বিএসএমএমইউয়ের নামও সুপারিশ করেছে। খালেদা জিয়ার কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও সুপারিশ করা হয়েছে।

৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী রাজধানীর কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর অনুরোধ জানায়। এরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যরা গতকাল শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী (ইন্টারনাল মেডিসিন), অধ্যাপক হারিসুল হক (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী (অর্থোপেডিক সার্জারি), সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলী (চক্ষু) ও সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

এদিকে এই মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কোনো চিকিৎসক না রাখায় এর সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ বলেছেন, তাঁরা এই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে সন্তুষ্ট নন। তিনি আরও বলেন, সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ডে উপযুক্ত ও সঠিক চিকিৎসা হবে না। আগে যাঁরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতেন, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে মেডিকেল বোর্ড করার দাবিও জানান তিনি।

চিকিৎসকেরা প্রতিবেদনে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপুর্ণ নয়। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ তারা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে চিকিৎসকেরা বলেন, চিকিৎসকেরা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কিছু চিকিৎসা দিয়েছেন। তাঁর শারীরিক কোনো ঝূঁকি নেই। তবে মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে বিএসএমএমইউ-এ ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন।

‘বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই বলছেন। ঝুঁকি যদি না থাকবে তাহলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড পরামর্শ দিল কেন ?’ প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, এটা একটি বিশ^বিদ্যালয়। এখানে সকল ডিসিপ্লিনের চিকিৎসা হয়। এখানে ভর্তি করা হলে তিনি একটি উন্নতমানের চিকিৎসা পাবেন। এ কারণেই মেডিক্যাল বোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন।’

একই প্রশ্ন মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরীকে করা হলে তিনি জানান, ‘স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই এমন কথা আমরা বলিনি। আমরা বলেছি মৃত্যু ঝুঁকি নেই। তিনি একজন বয়স্ক মানুষ। তার অনেকগুলো রোগ রয়েছে। আথ্রাইটিস এর মধ্যে অন্যতম। তার পায়ে রড লাগানো আছে। বাম হাতে কিছু ধরতে পারেন না। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা রয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছি।’

তিনি আরো জানান, ‘বাসায় রেখে যে চিকিৎসাটা করা যায় না তা হাসপাতালে করা সম্ভব। কারণ হাসপাতালে সব ধরনের মেশিন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের চিকিৎসা হয়। তিনি এখানে ভর্তি হলে একটি পুর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাবেন এবং আরাম বোধ করবেন।’

বেগম খালেদা জিয়ার রয়েছে বহুবিধ রোগ। একজন বয়স্ক মানুষের যত ধরনের রোগ থাকে তার প্রায় সবই রয়েছে। তার রয়েছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ, চোখের সমস্যা। দীর্ঘদিন থেকে তিনি আথ্রাইটিসের রোগী। তার পায়ে রড লাগানো হয়েছে। স্বাভাবিক চলাফেরা তিনি করতে পারেন না।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একজন বয়স্ক মানুষ হিসেবে তিনি বিশেষ যত্ন পাওয়ার অধিকারী। ইদানীং তার বাম হাতটি নিজে থেকে নড়াচড়া করতে পারছেন না অন্যের সহায়তা ছাড়া। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি পাশ বদলও করতে পারেন না। তার রয়েছে স্নায়ুবিক সমস্যা। কারাগারে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারটা মানবিক দিক থেকে দেখতে হবে। তিনি বর্তমানে আছেন নি:সঙ্গ পরিবেশে। এমন পরিবেশে যে কেউ যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। উচ্চ ঝুঁকির একজন রোগী হিসেবে তাঁর অসুস্থতা লাঘব হচ্ছে না বলে আদালচ চত্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।