সরকারের পদক্ষেপ ইতিবাচক তবে আন্দোলন চলবে

  ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ

কোটা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলছে কোটা আন্দোলনকারীরা। তবে তাঁরা দ্রুত প্রজ্ঞাপন চান ও মামলা থেকে তাদের সদস্যদের প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচার চান। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ-সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। কমিটি নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডের সব পদে মেধা ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।

সরকারের কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের বক্তব্যের পর আজ বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, আমরা সরকারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে প্রজ্ঞাপন হতে হবে। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে। হাসান আল মামুন আরও জানান, আমাদের যেসব সদস্যদের গ্রেপ্তার করে মামলার সঙ্গে জড়ানো হয়েছে তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার হতে হবে। তাঁদের দাবি মানতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়েও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, এটা আদালতের রায়কে স্পর্শ করবে না, কোনো সমস্যা হবে না। মানে কোনো কোটাই থাকবে না।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। দেখেই বলেছি, এখন কোটা না থাকলেও চলতে পারবে।’

নিচের পদের কোটার বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, নিচেরগুলো আগে যা ছিল তাই, এগুলো তাদের কর্মপরিধিতেও ছিল না।

পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়তো আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। মন্ত্রিসভা পাস করলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

৪০ তম বিসিএসে নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে কি না জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, এতে (বিজ্ঞপ্তি) বলা আছে, সরকার যদি ভিন্নরূপ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনুযায়ী কোটা থাকবে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। ঢাবি লাইব্ররি, ১৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: দীপু মালাকারবাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। ঢাবি লাইব্ররি, ১৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: দীপু মালাকারবর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান এই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিতে সদস্য ছিলেন ছয়জন সচিব।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের ব্যাপকতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মধ্যেই গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিল হবে বলে জানান। এরপর কোটা সংস্কার, বাতিল বা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার শাহবাগ থানায় চারটি ও রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল একটি মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান এজাহারভুক্ত আসামি। বাকি চার মামলার কয়েক শ আসামির সবাই অজ্ঞাতনামা। মামলাগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দুটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের বিশেষ শাখার এক সদস্যের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের চারটি ঘটনা রয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।