তাজিয়া মিছিলে কারাবালার মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণ

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ   ইসলামের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন আশুরায় কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে শিয়া মুসলমানরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল বের করেছেন।

মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পবিত্র আশুরা পালিত হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পুরান ঢাকার হোসাইনি দালানের ইমামবাড়া থেকে প্রধান তাজিয়া মিছিল শুরু হয়। এছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, লালবাগ, পল্টন এবং মগবাজার থেকেও তাজিয়া মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।

কেন্দ্রীয় তাজিয়া মিছিল ইমামবাড়া থেকে বকশীবাজার-নিউমার্কেট হয়ে ধানমণ্ডি লেকের প্রতীকী কারবালা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। হায় হোসেন, হায় হোসেন মাতম ও বুক চাপড়ে ফোরাত নদীর তীরের কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণ করেন তারা।

হিজরি ৬১তম বর্ষের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) ১০ মহররম মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন।

ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এ দিনটি অত্যন্ত পবিত্র। কেননা ১০ মহররম তারিখে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল।

এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ দিন নবী মুসার (আ.) শত্রু ফেরাউনকে নীলনদে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

এ দিনে নূহের (আ.) কিস্তি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পায়। এ দিনে দাউদের (আ.) তাওবা কবুল হয়। নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহিম (আ.) উদ্ধার পান। আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন।

এ দিনেই আল্লাহতায়ালা ঈসাকে (আ.) ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এ তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।

মুসলিম বিশ্বে এই দিনটি ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন।

এবার ১২ সেপ্টেম্বর মহররম মাস গণনা শুরু হওয়ায় শুক্রবার সারা দেশে আশুরা পালিত হচ্ছে। আশুরার সরকারি ছুটি এবার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মিলে গেছে।

বিগত দিনে তাজিয়া মিছিলে ছুরি, ধারালো অস্ত্রসহ যুবকদের দেখা যেত। ইমাম হোসেনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মরণে তারা নিজের শরীরে আঘাত করে নিজেকে রক্তাক্ত করতেন।

কিন্তু ২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে ইমামবাড়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে আশুরায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ তাজিয়া মিছিলে ধারালো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করে।

অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান বাস্তবতা পর্যালোচনা করে এবারও আশুরার দিন বিভিন্ন কর্মসূচি ও সবগুলো তাজিয়া মিছিল ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তাজিয়া মিছিলে অনেকের হাতেই দেখা যায় জরি লাগানো লাল আর সবুজ নিশান, মাথায় শোকের কালো কাপড়। কারবালার স্মরণে কালো চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করেন ইমাম হোসেনের প্রতীকী কফিন।

মিছিলের সামনে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়া, দ্বিতীয় ঘোড়ার জিন রক্তের লালে রাঙানো। ধানমণ্ডির প্রতীকী কারবালা প্রান্তরে পৌঁছনোর আগেই বৃষ্টি নামে। তার মধ্যেই শান্তির আশায় মোনাজাত করে তাজিয়া মিছিলের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।