ফোনটা ধরে আমিই জিজ্ঞেস করলাম ” কি অবস্থা, মোখলেছ” দূর্বল কন্ঠে উত্তর এল” স্যার, আমি মারা যাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  অবশেষে সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে নীরব ঘাতক ক্যান্সার কেড়ে নিলো সাতক্ষীরার মেধাবী ছাত্র নীরবের প্রাণ।
শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরার বেসরকারি সিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় এএইচ মোকলেছুর রহমান ওরফে নীরব। তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষ সম্মানের ছাত্র এএইচ মোকলেছুর রহমান নীরব। সাতক্ষীরা শহরের সরকারপাড়ার কাজী এনামুল হকের পুত্র নীরবের পাকস্থলিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে বছর দুয়েক আগে। এরপর প্রথমে ঢাকার ডেল্টা, পরে ভারতে চিকিৎসার পর তার অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়। কিছুদিন আগে সে ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবারও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি সাতক্ষীরার ফারজানা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিল নীরব। দুদিন আগে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকায় তাকে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরার সিবি হাসপাতালে। সেখানে মারা যায় নীরব।
বন্ধুদের সার্বিক সহায়তায় চলছিল নীরবের চিকিৎসা। দিনের পর দিন তারা অর্থ সংগ্রহ করে নীরবকে বাঁচিয়ে রাখার সব চেষ্টা চালিয়েও যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চির নিদ্রায় গেল নীরব। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় নীরব ‘ এইটুকু মেসেজ লিখবার জন্য আল্লাহ হয়তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ যেনো আমার জন্য বেহেশত নসিব করেন। দোয়া করবেন’।
নীরবের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত তার সহগাঠী বন্ধুরা। শোকে মুহ্যমান তার বাবা এনামুল হক, মা জোলেখা পারভিন এবং ভাই বোনসহ সব প্রতিবেশি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসানের বন্ধু অরুপ সরকার জানান, মৃত্যুর শেষ কয়েক দিন আগে পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে স্যালাইন ও ঐষধ লেগেছে। সেটিও আমরা বিভিন্নভাবে জোগাড় করছি। হাসান বাঁচতে চেয়েছিলো। আমরাও সর্বাতœক চেষ্টা করেছি। কিন্তু মৃত্যুর কাছে হেরে গেছি আমরা।
হাসানকে তত্বাবধায়নে রাখা ডাক্তার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, হাসানকে প্রথমদিকে অপারেশনের কথা বলেছিলাম কিন্তু রাজি হয়নি। পরবর্তীতে ক্যামোথেরাপি দেওয়া হয়। লিভার একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। যা চিকিৎসাসেবার আওতার বাইরে চলে যায়। তার পরিবারকে আগেই সব জানানো হয়েছিলো।
শহরের কোর্ট মসজিদে জানাযা শেষে নীরবকে দাফন করা হয়েছে রসুলপুর সরকারি গোরস্থানে।

 

ভোর ৬.২১ মিনিটে মোবাইলটা বেজে উঠল। ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।
পরিচিত কন্ঠস্বর (A H Moklasur Rahman, Hasan). জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, পাকস্থলী ক্যান্সারের রুগি। গত দুই বছর আমার পরামর্শে ঢাকা এবং ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার চিকিত্সা করার চেষ্টা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে টাকাটা হয়তঃ যেকোনো ভাবে যোগাড় হয়ে যেত। কিন্তু ওর রোগটা দেরিতে ধরা পড়ায় খুব বেশি কিছু করা যায় নি। শুধুমাত্র কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

ফোনটা ধরে আমিই জিজ্ঞেস করলাম ” কি অবস্থা, মোখলেছ”

দূর্বল কন্ঠে উত্তর এল” স্যার, আমি মারা যাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। ”

কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। শুধু বললাম,” মোখলেছ, আল্লাহ্কে ডাকো।”

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো” আল্লাহু আকবর ”

মেডিকেল কলেজের এডমিশন পরীক্ষা শেষে হল থেকে
বেরিয়ে আসতেই ড্রাইভার সাহেব বললেন স্যার আপনার ফোনের জ্বালায় অস্থির হয়ে গেছি। আর হাসান নামে আপনার একজন রুগি মারা গেছেন।
(ইন্নাইলাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন।)

সবাই মোখলেছুর রহমান হাসানের জন্য দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ্ তাকে জান্নাতবাসী করুন, আমীন।

Md Monoar Hossain
Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।