সংঘবদ্ধ বালি উত্তোলন চক্রের দৌরাত্ম্য হারিয়ে যেতে বসেছে চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম

চৌগাছা (যশোর) থেকে :যশোরের চৌগাছায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। বালি উত্তোলনের ফলে পাতিবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম হারিয়ে যেতে বসেছে।
বালি উত্তোলনের ফলে ইউনিয়নের পরিবেশ ও স্বাভাবিক চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সরকারি রাস্তা, বসবাসকারী বাড়ী-ঘর, বাড়ীর উঠান বিলিন হচ্ছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
১৭.৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাতিবিলা ইউনিয়নের অবস্থান। ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মধ্যে ছোট নিয়ামতপুর, বড় নিয়ামতপুর, পাতিবিলা, মুক্তদাহ, হয়াতপুর গ্রাম বালি উত্তোলন চক্রের আক্রমনের শিকার। প্রতিদিনই বালি  উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। চাষযোগ্য জমি ধ্বংস হয়ে যা

হারিয়ে যেতে বসেছে চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম

চ্ছে। এলাকার পুকুরগুলোও বালিগর্তে ধসে পড়ছে। ফলে মাছচাষিরা স্বাভাবিকভাবে মাছ চাষ করতে পারছেনা।
সরেজমিন গেলে দেখা যায়, বসবাসের এলাকা, কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ জমিতে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে গেছে। সবজি ও বাদাম চাষের জন্য ইউনিয়নটি বিখ্যাত হলেও ধীরে ধীরে আবাদি জমি সঙ্কুচিত হচ্ছে। যেন  দেখার কেউ নেই। ইউনিয়নে বালি উত্তোলনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। কৃষক ও গ্রামবাসীদের প্রলোভনে  ফেলে সিন্ডিকেটের মালিকরা বালি উত্তোলন করছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামবাসি বাঁধা দিলেও তারা জোরপূর্বক বালি  উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
বড় নিয়ামতপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, জমিরউদ্দীন, হাবিবুর রহমান, আব্দুর রব, ইউনুচ আলী অভিযোগ করে বলেন, এ গ্রামের শহীদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ভনা, মহাসীন রেজা, নুরুল আমিন ও পাতিবিলা গ্রামের আতিয়ার  রহমান বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছে। প্রতিদিন ১ থেকে দেড়’শ ট্রাক বালি উত্তোলন করছে। তারা বলেন, বারবার  বাঁধা প্রদান করা হলেও বালি উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে।  প্রভাবশালী মহলের মদদে তারা কাউকে তোয়াক্কা করছেনা।  দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে বালি উত্তোলনের ফলে গ্রামের  মমিনুল হকের জমি ও বেশ কয়েকটি বড় মেহগনি গাছ পুকুরে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বার বালু উত্তোলনকারীদের নিষেধ করেছি। তারপরও বালি উত্তোলন বন্ধ হয়নি। গ্রামের আমিনুল হক বলেন, বিষয়টি থানা পুলিশকে  জানিয়েছি। কিন্তু থানা পুলিশ বলেছে ল্যান্ডিং এর বিষয়ে আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। ভূমি কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আপনারা জানান।
বালু উত্তোলনের ফলে অনেকের বাড়ীর রাস্তা ধসে গেছে। ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম, ওলিয়ার রহমান, রবিউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম বলেন ইউনিয়ন পরিষদের নায়েবকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারপরও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। ভূক্তভোগী নুর ইসলাম, শামছুল আলম, রুহুল আমিন, মশিয়ার রহমান, নূর নবি, নাসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমরা নুরুল আমিন ও আতিয়ার রহমানকে ডেকে আমাদের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে সেটা দেখিয়েছি। একই সাথে বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করি। কিন্তু তারা কোন কথা শুনছেনা। হয়াতপুর এলাকায় সাবেক এক জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় ঐতিহ্যবাহি মর্জাদ বাওড় থেকে অবৈধ পন্থায় উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। গ্রামের নিচ দিয়ে প্রবাহবান এই বাওড়ে কমপক্ষে পাঁচটি

হারিয়ে যেতে বসেছে চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম

স্থানে বসানো হয়েছে মেশিন। দিন রাত ওই মেশিনের মাধ্যমে বাওড়ের তলদেশ থেকে তুলে আনা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাওড় পারেই স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। গ্রামবাসী জানিন, পাতিবিলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম, বিপ্লব হোসেন, ফারুক হোসেন, আব্দুল মমিন, কামাল হোসেন, আশরাফ হোসেন, রুলু মিয়া, নিয়ামতপুর গ্রামের ফজলুর রহমান, হয়াতপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনসহ প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি বাওড় থেকে অবৈধ পন্থায় বালি উত্তেলানে মেতে উঠেছে। কোন ক্রমেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। বালি উত্তোলনের ফলে আশেপাশের জমি,  বাড়ীঘরের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান, সামান্য টাকার জন্যি জমিডা শেষ করে দিলাম। এখন আমি নিষেধ করলেও তারা শুনছেনা। চৌগাছা-কোঁটচাদপুর পাকা সড়ক ধরে পাতিবিলা ইউনিয়নে ঢুকলে সড়কের দুপাশে বালু উত্তোলনের দৃশ্য চোখে পড়ে। শতশত বিঘা জমি বিলিন হয়ে গেছে। পাকা সড়কও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। যে কোন সময় পাকা সড়ক ধসে পড়তে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।
পাতিবিলা ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মধ্যে ছোট নিয়ামতপুর, বড় নিয়ামতপুর, পাতিবিলা, মুক্তদাহ, হয়াতপুর গ্রামের পরিবেশ ও স্বাভাবিক চিত্র পাল্টে গেছে। প্রতিদিন এই ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ৫’শ থেকে ১ হাজার ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন। ফসলি জমিও আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাতিবিলা ইউনিয়নের মানচিত্রই পাল্টে যাবে বলে অনেকে জানান।
বালি উত্তোলনের বিষয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই আকিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু ভূমির বিষয়টি আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। এটা ভূমি অফিসের বিষয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভূমি কর্মকর্তা যদি আমাদের বিষয়টি লিখিতভাবে জানায় তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালি উত্তোলনের বিষয়ে সোমবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও ঘটনাস্থলে নিজে যাব। পরিবেশের ক্ষতি করে যদি কেউ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে। তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।