হস্তান্তরের আগেই ধ্বংস হচ্ছে খুলনার বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের একটি প্রকল্প

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ খুলনা প্রতিনিধি:    চার বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম ও মাঠ। তাছাড়া নির্মাণ ত্রুটির কারণে চালুর আগেই বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন পুড়ে যাবার পাশাপাশি সুইমিং পুলের টাইলসগুলি উঠে গিয়ে অনেকটা ধংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে মাঠ সংস্কার হলেও রয়েছে পূর্বের অবস্থায়। সেখানে খেলাধুলারও কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে খুলনার ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে ভবনটি পরিদর্শন করেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। এমনকি তিনি সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়েও সুইমিং পুল ও মাঠ ব্যবহার উপযোগী করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি নির্মিত ভবনটি দ্রুত বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের উত্তর পাশের বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবনে আজ থেকে চার বছর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ১৮৯৪ বর্গমিটার মাপের একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল। আট লেইন বিশিষ্ট এ সুইমিং পুলটির দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার। রয়েছে গ্যালারী ও মহিলাদের ড্রেসিংরুমও। কিন্তু পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভাল হয়নি বলে সংস্থার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি এর পানি সরবরাহের পাইপলাইন ত্রুটি যুক্ত রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এজন্য পাম্প ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। এর কোন সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ নেই এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপিপিতে কোন অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়নি। ফলে চার বছর ধরে সুইমিংপুল ভবনটি পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়।

সূত্রটি বলছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি পরিচালনার দায়িত্ব বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার। কিন্তু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ হতে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থাকে এখনও দাপ্তরিকভাবে স্থাপনাসমূহ হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে এর সার্বিক ব্যবহারে কিছু ঘাটতি ও সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

সম্প্রতি বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে একটি পত্র দিয়ে সুইমিং পুল পরিচালনার জন্য জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও অপর একটি সূত্র জানিয়েছে। একই সাথে সেখানে সাতার প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অনুরোধ জানানো হয়।

বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার উপ-পরিচালক গোলাম সরোয়ার বলেন, সুইমিং পুলটি চালুর জন্য বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও পাম্প পুড়ে গেলে নতুন করে পাম্প বসানো হয়। এখন সেখানে পানি সরবরাহ করা হয়েছে।

কিন্তু পানি ভরাট হলেও সেটি সুইমিংপুল উপযোগী না হওয়ায় রোববার সন্ধ্যায় সরোজমিনে পরিদর্শন করে বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এতবড় একটি স্থাপনা কোন প্রকার তদারকি ছাড়াই পড়ে থাকা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ করে ক্রীড়ামোদীদের জন্য খুবই দু:খজনক। এটি চালু করে সাতারের জন্য বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা সম্ভব বলেও তিনি জানান।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মু. শুকুর আলী বলেন, খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবনের সুইমিং পুলটিকে কার্যকরী করার চেষ্টা চলছে। তবে আধুনিক সুইমিং পুল বলতে যেটি বোঝায় সেটি এখানে করা হয়নি। যে কারণে পানি ফিলটারেশনের কোন সুযোগ নেই। এখানে প্রতি সাতদিন অন্তর পানি পরিবর্তন করতে হবে। যেহেতু এখানে ফিলটারেশন প্লান্ট করা হয়নি সেহেতু এখন এভাবেই এটিকে চালাতে হবে। এজন্য এটিকে অবশ্য সুইমিং পুল নয়, বরং একটি বড় পুকুরও বলা যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলেছেন উল্লেখ করে জানান, যেহেতু আগে থেকে ফিলটারেশন প্লান্ট করা হয়নি সেহেতু এখন নতুন করে ফিলটারেশন প্লান্ট করার কোন সুযোগই নেই। এভাবে পানি তুলে পরিবর্তন করেই ব্যবহার করতে হবে বলেও প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।

এছাড়া নির্মাণ সংক্রান্ত অন্যান্য ত্রুটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতি অথবা ইঞ্জিনিয়ারদের যথাযথ তদারকির অভাব ছিল কি না সেটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে তার সাথেও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আওলাদ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পাম্প ও সাব-ষ্টেশন জ্বলে যাওয়াসহ কিছু ত্রুটি দেখা দেয়ায় বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম ও মাঠ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজটি এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত যাতে এটি চালু করা যায় সেজন্য চেষ্টা চলছে।

খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহ্সান বলেন, দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর সোনাডাঙ্গা মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স-এ প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল এবং মহিলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন মাঠ তৈরির কাজ করা হলেও প্রায় চার বছরেও পুলে কোন সাতারু নামতে পারেনি বা ব্যবহার উপযোগী করা হয়নি। চালু হওয়ার আগেই বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন পুড়ে গেছে। সুইমিং পুলের টাইলসগুলি উঠে যাচ্ছে, মাঠের কাজের অবস্থাও একই রকম। মাঠে কোন খেলাধুলাও করা যাচ্ছে না। এসব দুর্বল কাজের জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি তিনি দ্রুত এটি চালু করার দাবি জানান।

অপরদিকে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহ্সান ২০১৬ সালের ৮ আগষ্ট খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি পত্র দেন। ওই পত্রের আলোকে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ ওই বছর ১৮ আগষ্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বরাবর পত্র দেন। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১৬ সেপ্টেম্বর বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়াও একইভাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বরাবর পত্র দেন। সর্বশেষ পত্রে সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণে ত্রুটি এবং নিম্নমানের ভূমি ও মাঠ উন্নয়ন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানানো হয়।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।