ভোটার তুষ্টির বেশ কিছু নতুন প্রকল্প অনুমোদন গতি নেই পুরনো ৩৮ প্রকল্প বাস্তবায়নে

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভোটার তুষ্টির লক্ষ্যে গত কয়েকটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন, প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রকল্প অনুমোদন ও সংশোধন করা হয়েছে।তবে পুরনো প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩৮টি প্রকল্পের বাস্তবায়নে টাকা খরচের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প রয়েছেন ১৭টি এবং সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বাস্তবায়নাধীন ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প।

২৭ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় চলমান প্রকল্পগুলোর আগস্ট পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা। সভায় প্রকল্পগুলোর আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষপ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সংশোধনে বিলম্ব, অর্থছাড়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সময়ক্ষেপণ, নকশা পরিবর্তন, কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন না হওয়া, দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতা, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া ইত্যাদি কারণে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম রোববার  বলেন, নির্বাচন এখানে বড় বিষয় নয়, অর্থনৈতিক স্বার্থেই সব সময়ই রাস্তাঘাট ও সেতু চলাচলের উপযোগী রাখা উচিত। বিশেষ করে গ্রামীণ অকৃষিজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি পণ্যের বাজারজাত স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থনীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির স্বার্থেই সড়ক অবকাঠামোগুলো সচল রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত এ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য আরও বেশি নজরদারি করা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের অগ্রগতি সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয় ৮ অক্টোবর। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১৬টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮টি। এসব প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ১৩ হাজার ২২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক অর্থায়ন ৭ হাজার ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিলের ৫ হাজার ৯০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তা অংশের বরাদ্দ থেকে ২ মাসে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৩৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা। তা না হওয়ায় তৃতীয়বার সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবটি অনুমোদন প্রক্রিয়া করতে বিলম্ব হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) দ্রুত অনুমোদন করাতে সভায় প্রকল্প পরিচালককে নিয়মিত পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ায় সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নে লক্ষ্য রয়েছে। অর্থ ছাড়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এসএফডিকে তাগিদপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রকল্পটিরও আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট যেসব প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর অন্যতম হল- ঢাকা মাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল), ঢাকা ইনট্রিগেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প, মেট্রোরেলর লাইন-১ এবং লাইন ৫ এর সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প, সার্ক রোড কানেকটিভিটি: ইমপ্রুভমেন্ট অব জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা রোড টু ফোর লেন হাইওয়ে প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ), সাসেক সংযোগ সড়ক-২: হাটিকুমরুল-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক-৪ লেনে উন্নীতকরণ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহ, আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক-৪ লেনে উন্নীতকরণ এবং রাজাপুর-নৌকাঠি-বেকুটিয়া-পিরোজপুর সড়কের কঁচা নদীর উপর ৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু নির্মাণ প্রকল্প।

অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় আরও জানানো হয়, সরকারি তহবিলের অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১১৫টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এডিপিতে। তার মধ্যে ৪৫টি প্রকল্প তুলনামূলক অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পগুলোর বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ১২ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১২৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।

সরকারি তহবিলের অর্থে বাস্তবায়নাধীন যেসব প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি কাক্সিক্ষত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর-সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) পিপিপি প্রকল্প, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন, বড়কাতিয়া থেকে মিরেরসরাই ইপিজেড সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পাঁচদোনা-ভাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়ককে উভয় পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ ঢাকা জোন, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ খুলনা জোন প্রকল্প, মানিক

খালি সেতু নির্মাণসহ আশাশুনি-পাইকগাছা সড়ক উন্নয়ন, ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর

বাইপাস নির্মাণ, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন, উজানচর-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম সড়ক উন্নয়ন, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিটামইন সড়ক উন্নয়ন,

ঝিনাইদহ চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক উন্নয়ন, বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন-সালুটিকর-কোম্পানিগঞ্জ সড়ক কে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ, ফরিদপুর-সালথা-সোনাপুর-মকসুদপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং আন্তঃজেলা সীমান্ত সড়ক নির্মাণ ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা প্রকল্প।যুগান্তর

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।