খাশুগজিকে হত্যা করার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে সরিয়ে ফেলা হয় :অবশেষে সৌদি আরবও

বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আল জাজিরা : ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের ভেতরেই যে সাংবাদিক জামাল খাশুগজির মৃত্যু হয়েছে, অবশেষে তা স্বীকার করে নিল সৌদি আরব। সৌদি আরবের অ্যাটর্নি জেনারেলের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে গত শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, কনসুলেটে ‘মারামারিতে’ জড়িয়ে পড়ার পর জামাল খাশুগজির মৃত্যু হয় বলে ‘প্রাথমিক তদন্তে’ দেখা গেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, এ ঘটনায় সৌদি গোয়েন্দা দপ্তরের উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরি এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৌদ আল-খাতানিকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি ১৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি আরবের ওই ব্যাখ্যা ‘হয়ত সঠিক’।

তিনি ওই ঘটনাকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বললেও সৌদি আরবকে বর্ণনা করেছেন যুক্তরষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ মিত্র’ হিসেবে।

সাংবাদিক জামাল খাশুগজির অন্তর্ধানের দুই সপ্তাহ পর সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করা হল। সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত খাশুগজি এক বছর আগে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন।

বিয়ে করার জন্য ব্যক্তিগত কাগজপত্র নিতে গত ২ অক্টোবর তিনি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটে যান। সেখান থেকে তিনি আর বেরিয়ে আসেননি। কনসুলেটের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও সৌদি আরব তা ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে আসছিল।

কিন্তু খাশুগজির অন্তর্ধান রহস্যে একের পর এক রোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকলে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি ওঠে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ভেতর থেকেও।

তুরস্কের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটে ঢোকার আগে খাশুগজি তার অ্যাপল ওয়াচের রেকর্ডিং চালু করেন এবং তার আইফোন রেখে যান তার বাগদত্তার কাছে।

ভেতরে যা যা ঘটেছে, তার অডিও রেকর্ড আইক্লাউডে জমা হয়েছে এবং সেখানে তার ওপর নির্যাতন ও হত্যার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করা হয় তুর্কী কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।

বলা হচ্ছে, খাশুগজিকে হত্যা করার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে সরিয়ে ফেলা হয়। সৌদি আরব থেকে আসা ১৫ সদস্যের একটি দল ওই হত্যাকা-ে অংশ নেয়। হত্যাকা-ের পর তারা দ্রুত তুরস্ক ছেড়ে যান। তুর্কি সংবাদপত্রগুলোতে ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়, যাদের মধ্যে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এবং যুবরাজের বিশেষ নিরাপত্তা ইউনিটের সদস্যও রয়েছেন।

ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় বিশ্লেষকরা : কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতির এক পর্যায়ে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি এ ব্যাখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য আখ্যা দিলেও সিনেট গোয়েন্দা কমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা তা মানতে নারাজ। খাশোগি হত্যাকা- নিয়ে দেওয়া সৌদি আরবের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন রাজনীতি বিশ্লেষকরাও। জাতিসংঘ এ ঘটনায় ‘গভীর বিরক্তি’ প্রকাশ করেছে। এক ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সৌদি আরবের এই দাবি ঘটনা তদন্তে তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি তুলেছে তারা।

জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক খাশোগির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। খাশোগির পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ-স্বচ্ছ তদন্তের মধ্য দিয়ে দোষীদের বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সৌদি দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ সংঘর্ষের পর খাশোগি নিহত হয়েছেন বলায় তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংস্থার পক্ষে রাওয়া রাঘে শনিবার বলেছেন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাসহ অন্যান্য সংগঠনের কাছে এটা স্পষ্ট যে কী ঘটেছে তা জানা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত অপরিহার্য। তদন্তের নামে যেন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা না করা হয়, তা নজরে রাখবে সংস্থাটি।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।