আদালত একতরফা সব কিছু করছে : সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আদালত একতরফাভাবে সব কিছু করে যাচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত সেটি গ্রহণ করেননি।

পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত।’

তিনি বলেন, ‘গতকালকে একটি আদেশ হয়েছে, আমরা যে রিভিউ আবেদন করেছিলাম। যদিও আদালত সেটা খারিজ করেনি, আদালত সেটা নিষ্পত্তি করে বলেছেন যে, আমাদের আবেদনটা নিষ্পত্তি করার জন্য আজকের মধ্যে। কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল অন্তত আমাদের কথা শুনে আদালত সেই বিষয়টি যথাযথ আদেশ দেবেন। কিন্তু আমরা আজকের কজ লিস্টে দেখলাম মামলাটি রায়ের জন্য আছে। সুতরাং আমরা এটা বুঝতেই পারলাম না আমাদের যে পিটিশনটা আদেশ হওয়ার কথা ছিল সেটার কি হলো। এই কারণে আমরা বুঝলাম আদালত একতরফাভাবে সব কিছু করে যাচ্ছে। এজন্য আমরা এগ্রিব (সংক্ষুব্ধ) হয়ে আপিল বিভাগে গিয়েছি। আমাদের তো আর জায়গা নেই। আমরা সেই জন্য সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি দরখাস্ত দিয়েছি। তাতে বলেছি, যেহেতু আদালত আপনাদের গতকালের আদেশটি কমপ্লাই না করে রায়ের জন্য রেখেছে। আমরা মনে করি এই আদালতে যথাযর্থ বিচার পাবো না। এই কথা বলে আমরা একটা আবেদন নিয়ে গিলেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে এজে মোহাম্মাদ আলী আদালতকে বলেছেন, অতীতেও এমন নজির আছে তারপরও সেই আবেদনটি আপিল বিভাগ নেননি। এখানেও আমাদের একটা ব্যথা। আমরা কোথাও বিচার পাচ্ছি না। ১/১১ সময় যেমনিভাবে রাজনীতিবিদরা বিচার পায়নি। আজকেও এখানে মনে হচ্ছে সে রকম ব্যবস্থা হচ্ছে।’

আরো পড়ুন :
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক 
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলায় নিম্ন আদালত তাকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

এ মামলায় সাজা বাতিল চেয়ে আপিল আবেদন করেছিল আসামিপক্ষ। অপরদিকে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত আজ সাজা মওকুফের আবেদন খারিজ করে দেন। অপরদিকে দুদকের আবেদনের ওপর জারি করা রিভিশন রুল যথাযথ উল্লেখ করে সাজা বৃদ্ধি করেন।

রায় ঘোষণার সময় খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

এর আগে রোববার অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎস নিয়ে অতিরিক্ত সাক্ষ্য এবং আপিল শুনানির জন্য আরো সময় চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষ হয়। শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাইকোর্টে আমাদের আপিলের আর্গুমেন্ট এখনও শেষ হয়নি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদের আরো সময় প্রয়োজন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থের উৎসের বিষয় পরিস্কার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ (এভিডেন্স) চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। পরে মঙ্গলবার ওই আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। হাইকোর্টের ওই এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

গত মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে অতিরিক্ত এভিডেন্স চেয়ে আবেদনে আদেশ না পেয়ে আদালত বর্জন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থ ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা কুয়েতের আমির শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষার জন্য এতিমখানা করতে দিয়েছেন বলে খালেদা জিয়ার পক্ষে দাবি করা হয়েছে। অপর দিকে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ওই অর্থ এসেছে সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে।

শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এডিশনাল এভিডেন্সের জন্য কুয়েতের অমির যে অর্থ পাঠিয়েছেন এটা প্রমাণের জন্য যে ব্যাংকের মাধ্যমে (সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক) অর্থ পাঠানো হয়েছে তার কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করেন। ফৌজদারী কার্যবিধি ৪২৮ ধারা অনুযায়ী আপিলেট কোর্টও প্রয়োজনে অতিরিক্ত সাক্ষ্য নিতে পারেন। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন রেফারেন্স দেখান। তারা বলেন, এই মামলার অর্থের উৎস পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন। অর্থের উৎস পাওয়া গেলে মামলার মূল বিবেচ্য বিষয় ট্রাস্টের অর্থ পাবলিক ফান্ড না প্রাইভেট ফান্ড তা পরিস্কার হত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ বিচার শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন (১৬৭৬/২০১৮) দাখিল করেন খালেদা জিয়া। এ আপিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতের দেওয়া জরিমানার রায় স্থগিত করেন। পরবর্তীতে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চারমাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনে গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। তবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সময় বৃদ্ধির আবেদনে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।

অন্যদিকে এ মামলার আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদের করা আপিলের ওপরেও একই সঙ্গে শুনানির আদেশ দেন আদালত। নিম্ন আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কাজী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।