আজই ঢাকা ত্যাগ করছেন বার্নিকাট

ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ

প্রায় ৪ বছর বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। শুক্রবার (২ নভেম্বর) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ঢাকায় আসেন ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। বাংলাদেশে অবস্থানকালে রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বরাবরই। ৩৭ বছরের চাকরি জীবন থেকে অবসর নিতে চলেছেন এই কূটনীতিক।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষভাবে মনে রাখবে। কারণ তার সময়েই ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানব বিপর্যয় ঘটে। প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর মিয়ানমারের এইসব বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের প্রতি বরাবরই মানবিক ছিলেন এই পেশাদার কূটনৈতিক।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বার্নিকাট বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করেছেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকটকে ওয়াশিংটনের কাছে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করেন বার্নিকাট। সে কারণে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাও অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এছাড়া বার্নিকাট একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সবসময়ই সরব ছিলেন বার্নিকাট। তিনি একাধিকবার আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। এছাড়া মুক্তমত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে সবসময় বলে এসেছেন বার্নিকাট।

বিদায়ের আগে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নই ছিলো তার প্রধান লক্ষ্য। সে অনুযায়ীই তিনি কাজ করেছেন।

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বার্নিকাট জানিয়েছিলেন, ঢাকা-ওয়াশিংটনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তার একক ভূমিকা ছিলো না। তার সহকর্মীদের ভূমিকাও কম নয় বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ড্যান মজিনা। তার স্থলাভিষিক্ত হন বার্নিকাট। ৩৭ বছর চাকরি জীবন শেষে অবসর নেয়ার মাত্র কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন মার্শা বার্নিকাট।

ঢাকায় আসছেন পরবর্তী রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার

বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইতোমধ্যেই আর্ল রবার্ট মিলারের নাম ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ১৩ অক্টোবর মার্কিন সিনেটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে অনুমোদনও পেয়েছেন রবার্ট মিলার। আগামী ১৮ নভেম্বর তিনি ঢাকায় আসবেন।

আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মিলার। তিনি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের স্থলাভিষিক্ত হবেন। মিলার বতসোয়ানায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে মার্কিন কনস্যুলেটে কনসাল জেনারেল ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে ওয়াশিংটন, সান ফ্রান্সিসকো, মিয়ামি ও বোস্টনে কাজ করেছেন। ভারত, ইরাক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও এল সালভেদরের মার্কিন দূতাবাসে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন মিলার।

আরো দেখুন : ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপের প্রশংসা করেছে জার্মানি
০১ নভেম্বর ২০১৮

সংলাপের উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকায় নিয়োজিত জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহানহলজ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংলাপ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত এই প্রসংসা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে।

জার্মানির নতুন রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহানহলজ গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশে কাজ শুরুর পর বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পিটার ফারহানহলজ।

জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহানহলজ বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ ইতিবাচক। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংলাপের মাধ্যমেই রাজীনিতিতে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে বিশ্বাস করছি। একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবগুলো রাজনৈতিক দলই ইতিবাচক ভূমিকায় থাকবে বলে আশা করছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে সাক্ষাতে জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহানহলজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূষয়ী প্রশংসা করেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, পায়রা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমুখী প্রতিভার ফলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মাসেতুর মতো বিশাল প্রকল্প-যজ্ঞ বাংলাদেশ একাই বাস্তবায়ন করে বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে।’

জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহানহলজকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে সার্বিক আলোকপাত করেন। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য এবং এই সংকট মোকাবেলায় আর্থিক সহায়তার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী জার্মান সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

দেখুন:
Please follow and like us:

Check Also

এবার ইরাকে ইরানসমর্থিত সেনাঘাঁটিতে হামলা

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরাইল সংঘাত যেন বেড়েই চলেছে। এবার হামলা হলো ইরাকের রাষ্ট্রায়ত্ত প্যারা মিলিশিয়া বাহিনীর ওপর। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।