সংলাপের পর দুই পক্ষের দুই অভিমত

ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ  বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে নবগঠিত বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সংলাপ শেষে জোটের নেতার ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

”ভালো আলোচনা হয়েছে”, ড. হোসেন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপ শেষে মন্তব্য করেন।

তবে অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেছেন তারা সংলাপে ”সন্তুষ্ট নন।”

” আমরা এই আলোচনায় সন্তুষ্ট হতে পারিনি,” তিনি বিবিসিকে বলেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১-সদস্যের এক প্রতিনিধি দল গণভবনে যান।

তার সাথে এই সংলাপে যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির কিছু সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় নেতা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতারাও এ সময় তাদের সাথে ছিলেন।

এই সংলাপে আওয়ামী লীগের ২১-সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তার সাথে ১৪-দলীয় জোট শরিক নেতারাও এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি বিরোধীদল করেছে, সে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা হবে না।

খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি সংলাপে উঠেছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে। তাই এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।

ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচনের সময়ে বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কোনো আপত্তি নেই।

কিন্তু নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার দাবি ‘যৌক্তিকৰ নয় বলে আওয়ামী লীগ মনে করে।

বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দেয়ার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, তারা এবিষয়ে বিরোধীদলের কাছ থেকে তালিকা চাইবেন। এবং তারা এগুলো খতিয়ে দেখবেন।

এর আগে সংলাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রায় দশ বছর মেয়াদে তার সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “দেশের মানুষ ভালো আছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে।”

”দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম সেই দিন বদল হচ্ছে। এটাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি চিঠিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের সাত-দফা দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনা বসার প্রস্তাব করা হয়।

ঐ প্রস্তাবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংলাপে বসতে রাজী হওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে বিরোধীদলীয় নেতারা বিস্মিত হন।

তবে বাংলাদেশে গত প্রায় তিন দশক ধরে মীমাংসা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে যে সব চেষ্টা হয়েছে তাতে সাফল্যের নজির নেই বললেই চলে।

তত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে ১৯৯৪ সালে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব মধ্যস্থতার জন্য তার একজন দূত পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তা সফল হয়নি।

দু’হাজার চার সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মহাসচিব পর্যায়ের দীর্ঘ সংলাপেও কোনো লাভ হয়নি, যার জের ধরে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত একটি সরকার ক্ষমতা নিয়ে নেয়।

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশ নেয়, তা নিশ্চিত করতে বিদেশীদের মধ্যস্থতায় মীমাংসার একাধিক চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছিল।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ চারটি দলের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত ১৩ই অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।