সাতক্ষীরায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে

আব্দুস সামাদ: অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে। তাই নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিজেদের পছন্দমত স্কুলে ডেপুটেশন নিয়ে চাকরি করছেন পাঁচ সহকারী শিক্ষক। বর্তমান সরকারের বদলী নীতিমালায় ডেপুটেশন দেওয়ার কোন সুযোগ না থাকলেও প্রায় চার বছর ধরে একই বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে রয়েছেন এ পাঁচ শিক্ষক। কেউকে আবার ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে উপজেলার বাইরে অন্য উপজেলায়, কাউকে আবার জেলার গন্ডি পেরিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য জেলায়। এভাবে ডেপুটেশন দেওয়ার কোন সুয়োগ নেই স্বীকার করলেও অজ্ঞাত কারণে জেলায় নজিরবিহীন এ ডেপুটেশনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন।
জেলা প্রাথমকি শিক্ষা অফিসের তথ্য থেকে জানা যায়, জেলার বর্তমানে ২৪ জন শিক্ষক ডেপুটেশনে আছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১১জন, আশাশুনি উপজেলায় তিন জন, দেবহাটা উপজেলায় দু’জন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ছয়জন ও শ্যামনগর উপজেলায় দু’জন। তবে নিয়োম না থাকায় তালা ও কলারোয় উপজেলায় কোন ডেপুটেশন নেই বলে জানিয়েছে স্ব স্ব উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ডেপুটেশনপ্রাপ্ত শিক্ষক: শিমুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহের খাতুন ২০১৫ সালের ১০ জুন থেকে, জিএন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শরীফা শামছুন্নাহার ২০১৬ সালের ১৬ মে থেকে, রামেরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রেহেনা পারভীন ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে, দক্ষিণ ফিংড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সৈয়দা তহমিনা ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে, মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রওশন আক্তার বানু ২০১৭ সালের ৭ মে থেকে পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন। শিকড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সায়মা ইয়াসমিন ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে পুর্বদহকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন। মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহনাজ আক্তার ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন। মুকুন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রেক্সনা পারভীন ২০১৮ সালের ১২ মার্চ থেকে আখড়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন। দক্ষিণ দেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফারজানা মতিন ২০১৮ সালের ১২ মার্চ থেকে যোগরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন। বলাডাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুরাইয়া ইয়াসমিন ২০১৮ সালের ১২ মার্চ থেকে এবং জিএন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাজমা খাতুন ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ থেকে নবযুগ শিক্ষা সোপান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন।
শ্যামনগর উপজেলায় ডেপুটেশনপ্রাপ্ত শিক্ষক: ১৪২নং শৈলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আনারুল হককে ৫৬নং ভুরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ১৫৮নং মাধ্যমঝাপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কানন বালা গায়েনকে ৬১নং ভেটখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলায় ডেপুটেশন প্রাপ্ত শিক্ষক: বিলবকচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিধান চন্দ্র মন্ডল ২০১৮ সালের ১৭ মে থেকে কোডন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, তুয়ারডাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক অম্বিকা আঢ্য ২০১৮ সালের ৪ জুলাই থেকে বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পিরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রেহেনা বিলকিস ২০১৮ সালের ১৫ মে থেকে শ্রীরামকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন।
দেবহাটা উপজেলায় ডেপুটেশন প্রাপ্ত শিক্ষক: ১৩নং ঘলঘলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র পাল ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২৩নং সখিপুর দীঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ৪৮ নং উত্তর সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক দূর্গা রানী দেব ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে খুলনা জেলার শিরোমনি মহাসিন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন।
এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রণব কুমার মল্লিক বলেন, এসব ডেপুটেশনের বিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না। অনেক আগে থেকে এ ডেপুটেশন গুলো দেওয়া হয়েছে। এদের উপরের অর্ডার আছে। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। নিয়ম বহি:ভূতভাবে জেলার বাইরে ডেপুটেশন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনিয়ম জানি না, যা আছে থাক না অসুবিধা কোথায়-এই বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
কালিগঞ্জ উপজেলায় ডেপুটেশনপ্রাপ্ত শিক্ষক: চালিতা বড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শামীমা ইয়াসমিন ২০১৬ সালের ২৬ জুন থেকে, মৌতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক স্বপ্না রানী ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে, কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. ছাইফুল্লাহ সিদ্দিকী ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আজিজুর রহমান ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এবং ঘোনা মাঘরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন। এছাড়াও শুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজিজ আনজুম ২০১৪ সালের ১৮ মে থেকে উপজেলার বাইরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামাল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে আছেন।
এ উপজেলায় যে ৬ জন শিক্ষককে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে পাঁচ জনকেই একই বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। বাকি একজনকে উপজেলার বাইরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল হাকিম বলেন, এ ডেপুটেশনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে। এর আগের যে ডিপিইও স্যার ছিলেন। তিনি এসব ডেপুটেশন বাতিল করার জন্য আমাদের কাছে তালিকা চেয়ে ছিলেন। তালিকার প্রেক্ষিতে তিনি এখান থেকে দেওয়া ডেপুটেশনগুলো বাতিল করেছিলেন। কিন্তু যেগুলো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো বাতিল করতে পারেন নি। তবে তিনি এগুলো বালিত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে এবং অধিদপ্তরে লিখেছিলেন। এসময় তিনি নিয়ম বহি:ভূত এসব ডেপুটেশন বাতিল হওয়া দরকার বলেও জানান।
ডেপুটেশনের কোন নিয়ম নেই স্বীকার করে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন বলেন, যদি কোন শিক্ষক ডেপুটেশনে থাকে তবে সেটি অবৈধ। তবে, আমি কোন ডেপুটেশন দেইনি। পূর্বে কোন ডেপুটেশন দেওয়া থাকলে সেগুলোর দায়-দায়িত্ব আমার না। আপনি পত্রিকায় লেখেন। লেখার পর তা দেখে আমি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।