লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় শায়িত তরিকুল ইসলাম

তরিকুল ইসলাম তারেক, যশোর:লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত চিরবিদায়য়ের মধ্য দিয়ে যশোর কারবালা কররস্থানে শায়িত হলেন গণমানুষের নেতা তরিকুল ইসলাম। বাদ আসর যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে লাখমানুষ উপস্থিত হন প্রিয় নেতা তরিকুল ইসলামের নামাজে জানাজায়। যশোরের ইতিহাসে এতো বেশি মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা এর আগে কখনো হয়নি।

পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিকেল চারটার দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের লাশ যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে আনা হয়। শহরের সবচেয়ে বড় খোলা জায়গাটি অল্প সময়ের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। ঈদগাহ ছাড়িয়ে মানুষজন পূর্বদিকের মুজিব সড়ক, দক্ষিণে জেলা জজ আদালত চত্বর, উত্তরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে কাতারবন্দি হন। এমনকি জায়গা না পেয়ে অনেককে লাশের সামনের দিকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায়। উপস্থিত লোকজনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিএনপি নেতারা।

মানুষের স্রােত বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘একই স্থানে দ্বিতীয় জানাজা হবে। আপনারা যারা প্রথম জানাজায় অংশ নিতে পারছেন না, তারা দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নেবেন।’

কিছু সময়ের মধ্যেই অবশ্য ধর্মীয় কারণে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। জানানো হয়, একই স্থানে দ্বিতীয় দফা জানাজা হওয়ার সুযোগ নেই। কাতারগুলোকে আরো সংকুচিত করে সামান্য ফাঁকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই ঘোষণার ফলে যে যেখানে ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়েন জানাজার নামাজ পড়তে। এমনকি কিছু লোককে মরদেহের পশ্চিম পাশে বাদশাহ ফয়সাল স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় স্কুলের পাশের দুই রাস্তায়ও দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায়।

প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, এটি যশোরের ইতিহাসে বৃহত্তম জানাজা। এতো বেশি মানুষ আর কোনো জানাজায় অংশ নেননি।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম রন্টু বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় যশোরে এতো বেশি মানুষকে কোনো জানাজায় অংশ নিতে দেখিনি। দলমত নির্বিশেষে মানুষ এসেছেন তরিকুল ইসলামের জানাজায়।’

শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনকালে বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ছাড়াও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, প্রচার সম্পাদক হাজী আনিসুর রহমান মুকুল প্রমুখ।

ড. মঈন খান মরহুম তরিকুল ইসলামকে ‘যশোর তথা দক্ষিণবঙ্গের মানুষের প্রাণের নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মন্ত্রী থাকাকালে তিনি যশোরের উন্নয়নে কীভাবে অবদান রেখেছেন তা-ও বর্ণনা করেন ড. মঈন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী মরহুম তরিকুল ইসলামকে ‘তার নেতা’ সম্বোধন করে বলেন, এই মৃত্যু মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো; যা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

এছাড়া তরিকুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে শান্তনু ইসলাম সুমিত ও ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বক্তব্য রাখেন।

সুমিত উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বাবা রাজনীতি করতেন। তার অনেক ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। যদি তিনি কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে তা মাফ কর দেবেন।’ এই সময় জানাজায় আসা হাজারো মানুষ হাত উঁচু করে ‘হ্যাঁ-সূচক’ সম্মতি জানান।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার বাবাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ায় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত যশোরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অমিত তার বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য উপস্থিত জনতার কাছে দোয়া চান। তিনি যখন সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন অনেক মানুষকে কাঁদতে দেখা যায়।

জানাজায় বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারি হেলাল, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ, স্বেচ্ছাসেবকদলের কেন্দ্রীয় নেতা মহসিন কবির, জাসদের কার্যকরি সভাপতি রবিউল আলমসহ খুলনা বিভাগের দশ জেলা-উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন এবং যশোরের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জয়ন্তকুমার কুণ্ডু প্রমুখ।

জানাজা শেষে তরিকুল ইসলামের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কারবালা কবরস্থানে। মাগরিববাদ কারবালা জামে মসজিদে তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বুধবার মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শহরের ঘোপে নিজ বাড়িতে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। সকালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় এবং জাতীয় সংসদ প্লাজায় তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে যশোরে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে লাশ সোজা নিয়ে আসা হয় তার ঘোপের বাড়িতে। সেখান থেকে নেওয়া হয় বিএনপি যশোর জেলা কার্যালয়ে। সেখানে মরহুমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও তা হয়নি। মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে ওই কর্মসূচি স্থানান্তর করা হয় ঈদগাহে। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে বহু সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুম নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

000-00000000

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শেষ নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে যশোরে। সোমবার বাদ আছর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন জজকোর্ট জামে মসজিদের পেশ ইমাম।
জানাযায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, যশোর পৌরসভার মেয়র যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামছুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নগর বিএনপির সভাপতি ও যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলামসহ যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা কর্মী ও সমর্থক। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলাম, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জানাযায় যশোর শহর ছাড়াও জেলার আটটি উপজেলা এবং আশ পাশের জেলা থেকেও দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার হাজারও মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তরিকুল ইসলামের লাশ হেলিকপ্টারে করে যশোরে আনা হয়।
জানাযা শেষে ড. মঈন খানের সাথে মরহুমের লাশে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নিতাই রায় চৌধুরী, যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
জানাযা পূর্ব সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন মরহুমের দুই ছেলে শান্তনু ইসলাম সুমিত, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তারা তাদের পিতা তরিকুল ইসলাম যশোর-৩ আসন থেকে চার বারের সংসদ সদস্য ও চারবার মন্ত্রী থাকাকালীন অনেক সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন উল্লেখ করেন। তাদের পিতার জীবদ্দশায় তার ব্যবহারে কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন এজন্য ক্ষমা চেয়ে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন তারা। পিতাকে ভালবেসে হাজারও মানুষের জানাযায় উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ছোট জেলে অমিত বলেন, এভাবে যেন তারাও মানুষের ভালবাসায় আবদ্ধ থাকতে পারেন এই কামনা করেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার পিতার জন্য নামাজে জানাযার ব্যবস্থা করায় ডেপুটি স্পীকারের প্রতি এবং জানাযায় যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও যশোর-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ কাজী নাবিল আহম্মেদ উপস্থিত থাকায় তাদের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে গভির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। জানাযা শেষে তরিকুল ইসলামের লাশ শহরের কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত রবিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন দক্ষিণবঙ্গের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা তরিকুল ইসলাম। #

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।