রাজনীতিতে নতুন ক্লাইমেক্স

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট থেকে আজকের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অভিন্ন। মাঝখানে ৬৫ বছর। ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক সমাবেশ করেছিল। রেসকোর্স ময়দান নাম পরিবর্

ক্রাইমবার্তা রিপোট:

মামলার পাহাড়ের ওপর দিয়ে হাঁটছে বিএনপি। সারাদেশের ২৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঝুলছে প্রায় ৯০ হাজার মামলা। সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘গায়েবি’ মামলা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বন্দি। ক্ষমতাসীনদের জুলুম-নির্যাতন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সারাদেশের নেতারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত। নির্বাচন কড়া নাড়ছে দরজায়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি শৃঙ্খলিত। নানা শর্তে পুলিশের অনুমতি নিয়ে দু-চারটি সমাবেশ করলেও সাংগঠনিক তৎপরতায় পদে পদে বাধার মুখে পড়েছে বিএনপি। পহেলা সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ১২ ঘণ্টা আগে ২৫ শর্তে সমাবেশের অনুমতি পেয়ে ঢাকার রাজপথে নামিয়েছিল মানুষের ঢল। সিলেট-চট্টগ্রামের সমাবেশ হয়েছে বিধিনিষেধের বেড়াজালে। সেই বিএনপির ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আজ। নির্বাচন ইস্যুতে সমাবেশ হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে। কেমন হবে সমাবেশ? পুলিশ কি পুরনো কৌশলে পথে পথে সমাবেশে আসা জনতাকে ঠেকাবে? এই সমাবেশের জনসমাগম কি ক্ষমতাসীনদের ভীত কাঁপিয়ে দিতে পারবে? নির্বাচন আয়োজনে তাড়াহুড়া করায় ঐক্যফ্রন্ট থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনকে ‘কড়া বার্তা’ দেয়া হয়েছে। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার যখন চেষ্টা চলছে; তখন সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার দোহাই দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো সংসদের ৫ বছর মেয়াদের চরম সীমায় সমাবেশ থেকে সারাদেশের নেতাকর্মীদের কী ধরনের বার্তা দেয়া হবে?

প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চার এই দেশে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা কার্যত জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের দাবির গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার বিষয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটও একমত। কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকে ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ পথে তারা হাঁটছে। অবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ দেয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে। এ অবস্থায় বিএনপি ইতিহাসের পাতায় ভর করেছে। ৬৫ বছর পর আবার কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে? ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঞ্চালনায় গঠিত জাতীয় যুক্তফ্রন্ট যেন ১৯৫৩ সালের যুক্তফ্রন্টের সমার্থক। ব্যালটের মাধ্যমে ভোট বিপ্লব ঘটাতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন উপলক্ষে আগের বছর (১৯৫৩ সাল) ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে গঠিত হয় ‘যুক্তফ্রন্ট’। আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, গণতন্ত্রী দল ও খেলাফত পার্টির সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টের নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ওই সময় এ কে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগের চেয়ে অনেক দুর্বল। কিন্তু আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে না এসে কৌশলে ছোট দলের বড় নেতা ফজলুল হককে যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে রাখেন। ১৯৫৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে (২৩৭ আসন) ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটিয়ে যুক্তফ্রন্ট পায় ২১৫ আসন। ওই নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করেও ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯ আসন। ঘটনার ৬৫ বছর পর এবার গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতোই ফ্রন্টের নেতৃত্বে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেই। এ কে ফজলুল হকের মতোই নেতৃত্বে রয়েছেন ছোট দলের বড় নেতা ড. কামাল হোসেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতোই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রয়েছেন ফ্রন্টের মুখপাত্রের দায়িত্বে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ছোট দলের তিন জাঁদরেল নেতা আ স ম আবদুর রব, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও মাহমুদুর রহমান মান্না। সারাদেশ তো বটেই বিশ্বের দেশে দেশে এই ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পাচ্ছে ব্যাপক কাভারেজ। রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়া পড়ে গেছে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ক্ষমতাসীন জোটের নীতিনির্ধারকদের টনক নড়ে। ঝড়ো বাতাসে কেঁপে ওঠে রাজনীতির ভিত। নির্বাচন ইস্যুতে দীর্ঘদিনের ‘সংলাপের দাবি’ তোয়াক্কা না করলেও সংলাপের বন্ধ কপাট খুলে গেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি নিয়ে গণভবনে চলছে ধারাবাহিক সংলাপ। সংলাপের আলোচনা ডালপালা ছড়াচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল, মির্জা ফখরুলদের সঙ্গে সংলাপ করলেও ক্ষমতাসীন দল সংলাপকে হালকা করার কৌশল নিয়ে তাদের অনুগত-বাধ্যগত ও অনুকম্পানির্ভর দল ও জোটগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করছে। ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ধুলার আস্তরণে চাপা দিতে এইচ এম এরশাদ ও বি চৌধুরীর মতো একান্ত অনুগতদের সঙ্গে সংলাপে বসছে। ঐক্যফ্রন্টের বাইরে গণভবনে সংলাপে অংশ নেয়া এইচ এম এরশাদের দাবি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে আসনের দরকষাকষি। আর বি চৌধুরীর চাওয়া পুত্র মাহী বি চৌধুরীকে এমপি করতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেন শেখ হাসিনা ভ‚মিকা রাখেন। সুবিধাবাদী মেরুদন্ডহীনদের কাতারে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নেয়ার চালাকি প্রকাশ হয়ে গেছে।
ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা কার্যত গণমানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সনদ। ক্ষমতাসীনরা সংলাপে সরাসরি বিরোধিতা না করলেও দাবিগুলো মানছে না। তারা সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সুচিন্তিতভাবে সংবিধানের ভেতরে থেকেই কীভাবে দাবিগুলো পূরণ করে জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায় সে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। কয়েকদিন থেকে ঐক্যফ্রন্টের নীতি নির্ধারণী মহল দফায় দফায় বৈঠক করছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আওয়ামী লীগের অনুগত আইনজীবী হিসেবে পরিচিত তুরিন আফরোজসহ দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীরা সংবিধানের ভেতরে থেকেও দাবি মেনে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব বলে মত দিয়েছেন। এ অবস্থায় আগামীকাল ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় দফায় সংলাপ হবে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছেন। এতে ফ্রন্টের শক্তি আরো বেড়েছে। ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না এর আগে সিলেট ও চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে হাজির ছিলেন। কিন্তু কাদের সিদ্দিকী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে প্রথম যোগ দেবেন। ফলে সমাবেশে নতুনত্ব কিছুটা থাকছেই। গতকাল রাতে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক থেকে বের হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশ সফল করতে ব্যপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা ৭ দফা দাবি দিয়েছি একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে সংসদ বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সামরিক বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের প্রশ্ন আছে। সাথে মূল ফোকাস থাকবে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপরে আর সংবিধান সংশোধন করার প্রস্তুাব। তবে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাদের ওপর যেন সরকার কোন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সংলাপে আমরা সে প্রতিশ্রুতি দেয়ার চেষ্টা করবো।
জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সরকার এবং জনগণকে নতুন বার্তা দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জনসভা সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ৭ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে লাখ লাখ মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার জনসভাকে ঘিরে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করছে। কিন্তু জনসভাকে ঘিরে সরকার যে ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে তা সফল হবে না। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে এই জনসভা স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভায় পরিণত হবে। কোনো বাধাই জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, পুলিশ জনসভার অনুমতি দিয়েছে। তবে এর আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। জনসভাকে সফল করতে সভায় উপস্থিত সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার জানান, জনসভা সফল করতে ঢাকা মহানগরের সকল থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে পৃথকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কমিটির সাথে মহানগর নেতৃবৃন্দ পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। জনসভায় প্রতিটি থানা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, এই সমাবেশ আয়োজন করতে খুবই অল্প সময় পেয়েছি। তারপরও জনগণের যে আকাক্সক্ষা, গণজাগরণ, সেই গণজাগরণের মধ্য দিয়ে সর্ববৃহৎ একটি সমাবেশ হবে।
দেশি-বিদেশি চাপ এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ-সংস্থাগুলোর কারণেই হোক না কেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট সংলাপের আয়োজন করেছে। সংলাপে নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনাও চলছে। কিন্তু সংবিধানের মধ্যে থেকেই সঙ্কটের সমাধানের উদ্যোগের প্রতি জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকালও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করে তাহলে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে পুনঃ সংলাপের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে ৩ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। ক্ষমতাসীনদের এই ‘সংবিধানের ভেতরে থাকা’ চিন্তা মাথায় রেখে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা দু’দিন থেকে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। সংবিধানের ভেতরে থেকে কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন। সংলাপ নিয়ে এই যখন অবস্থা তখন সঙ্কট সমাধানের নানা থিওরি বাতাসে ভাসছে। হাওয়ায় ওড়ানো এসব নতুন নতুন থিওরি মিডিয়ায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত বরাত দিয়ে খবর হচ্ছে। প্রভাবশালী এক দৈনিকের অনলাইন সংস্করণের খবরে বলা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট ৪ নভেম্বর সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন। ওই সময় ৭ দফা দাবি দিলেও অন্তত ৩টি দফা মানা হলে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। প্রথমত, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ, দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মন্ত্রী করে তাদের স্বরাষ্ট্র বা জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়া (২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল), তৃতীয়ত, খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি ও তার ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাজা স্থগিত।
সংলাপ নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত তখন নির্বাচন আয়োজনে ইসির যেন তর সইছে না। ঐক্যফ্রন্ট থেকে আগেই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয় সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করতে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেন বিগত কাজী রকিব উদ্দিন কমিশনের মতোই সরকারের আজ্ঞাবহ ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়ে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণায় মরিয়া। ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হবে খবর দিয়েছে। এ অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গতকাল তফসিলের তারিখ পেছানোর দাবি জানাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে যান। আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সিইসি কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংলাপে আমাদের দাবির মধ্যে রয়েছে সংসদ ভেঙে দেয়া। ফলে সংলাপের সিদ্ধান্ত আসার পরেই ইসি তফসিল ঘোষণা করবে। এ সময় মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে সিইসির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। মান্না বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোনো অনাস্থার কথা বলতে আসিনি। তবে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। মান্নার বক্তব্যের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, আপনাদের (রাজনৈতিক দল) ওপরও তো জনগণের আস্থা নেই। সিইসির এই বক্তব্যের পর মান্না বলেন, ‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ।’ তবে আ স ম আবদুর রব বলেছেন, আমরা বলেছি আপনারা জনগণ, আমরাও দেশের জনগণ। আমাদের মা-বাবা, সন্তান নিয়ে দেশে থাকব। ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর আমাদের ও নির্বাচন কমিশনকেও দেশে থাকতে হবে। আপনারা সেভাবে কাজ করবেন, যাতে আপনারাও দেশে থাকতে পারেন। বিষয়টি মাথায় রাখবেন। অবশ্য রাতে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, আগামী ৮ নভেম্বর কমিশনের সভা আছে। ওই সভায় ৭ নভেম্বরের সংলাপের বিষয়টি প্রতিফলিত হবে। তবে তফসিল পেছানো হবে কিনা, সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
৭ দফা নিয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাহাস চলছে। একই সঙ্গে রয়েছে ইসি’র প্রতি ঐক্যফ্রন্টের চাপ। এসবের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ দেশের রাজনীতিতে নতুন ক্লাইমেক্সই মনে হচ্ছে। #

Check Also

আলিপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জিয়াউল ইসলাম জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদরের আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।