নির্বাচনে যাচ্ছেন না সিনিয়র বাম নেতারা!

ক্রাইমবার্তা রিপোট:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিনিয়র বাম নেতারা যাচ্ছেন না। আসন জটিলতা, ভোটপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তাসহ কয়েকটি কারণে তাদের মধ্যে এই অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। যদিও গত মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে জোট জানিয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বাম জোটসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তোলা দাবির বিষয়ে কোনও সমাধান না করে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। একে ‘একতরফা নির্বাচনের জন্য সরকারের ফাঁদ’ বলে জনমনে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন বাম নেতারা। তাই, সেই ‘ফাঁদে’ পা না দিয়ে শীর্ষ নেতাদের প্রার্থী না করে, মধ্যমসারির নেতাদের নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতান্ত্রিক জোট। সিনিয়র কয়েকজন বাম নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে।

বাম নেতাদের ভাষ্য, সরকার অনেকটাই বেকায়দায় রেখে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ‘দৃশ্যত খালি মাঠ ছেড়ে না দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত না থাকলেও ভেতরে-ভেতরে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের তফসিল পেছানো, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়ার কারণে নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। আর এ কারণেই সিনিয়র নেতারা ভোটের মাঠে নিজেদের নাম জড়াতে চাইছেন না।

নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনীহা আছে, এমন শীর্ষনেতাদের মধে রয়েছেন গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ (জামান) খালেকুজ্জামান, মোশরেফা মিশু অন্যতম। এই জোটের বাইরে বদরুদ্দীন উমর নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলও নির্বাচনেই যাবে না।

বাম জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক  বলেন, ‘আমি নির্বাচনে অংশ নেবো কিনা, পার্টি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবারও পার্টি বৈঠক করেছে কয়েক ঘণ্টা।’ তবে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সাইফুল হক নির্বাচন করবেন না। এই সূত্রের ভাষ্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনও সম্ভাবনা নেই।

অবশ্যই সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন। সিনিয়র এই বামনেতা মনে করেন, ‘মূলত কারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, সেটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। আমার শারীরিক অবস্থাও তেমন একটা ভালো না। আমাদের বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো কেবলই নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, আরও নানা রকম কাজ থাকে। সেক্ষেত্রে পুরো লিডারশিপই নির্বাচনে অংশ নেয় না। এতে কোনও সমস্যা নেই।’

সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাস্তে মার্কার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে সুপারিশের মাধ্যমে নাম আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রার্থী হিসেবে যে সব কেন্দ্রীয় নেতার নাম এসেছে, তারা হলেন—সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান (জামালপুর-২), সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন (নরসিংদী-৪), প্রেসিডিয়াম সদস্য মিহির ঘোষ (গাইবান্ধা-২), আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন (কুমিল্লা-৫), রফিকুজ্জামান লায়েক (ফরিদপুর-৩), কেন্দ্রীয় নেতা দিবালোক সিংহ (নেত্রকোণা-১), ডা. ফজলুর রহমান (নওগাঁ-৪), অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত (ময়মনসিংহ-৪), জলি তালুকদার (নেত্রকোণা-৪), আহসান হাবীব লাবলু (ঢাকা-১৩), আজহারুল ইসলাম আরজু (মানিকগঞ্জ-৩), সাজেদুল হক রুবেল (ঢাকা-১৫), অ্যাডভোকেট. মন্টু ঘোষ (নায়ারণগঞ্জ-৫), মৃণাল চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১), আমিনুল ফরিদ (বগুড়া-৭), অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ (ভোলা-১), লীনা চক্রবর্তী (ঢাকা-১৯) প্রমুখ। আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে।

ওই সময়ের মধ্যে তৃণমূল থেকে যথা নিয়মে অর্থাৎ শাখা পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কমিটির অভিমতের ভিত্তিতে আবেদন পাঠাতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নেবেন না গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। সরাসরি তার ভাষ্য জানা না গেলেও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ দুই নেতা জানান, মোশরেফা মিশু নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এই প্রসঙ্গে বাম জোটের বাইরে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা ফয়জুল হাকিম লালা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নেবে না।’বাংলা ট্রিবিউন

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।