কক্সবাজার হোটেল থেকে উদ্ধারকৃত জেলা জামায়াতের সেক্রেটারির ও উপজেলা চেয়রম্যানের জানাযায় শোকাহত জনতার ঢল# কাঁদলেন আ.লীগের এমপিও

সকাল সাড়ে দশটায় জানাযার সময় থাকলেও ২০ মিনিট পরে জানাজা সম্পন্ন হয়। ইমামতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা মাওলানা আবদুল হালিম।

জননেতা জিএম রহিমুল্লাহর জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার আদরের ভাই জিএম রহিমুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ বিশ্বাস হয়নি। কিভাবে তিনি এত অল্প সময়ে চলে যাবেন ভাবিনি।

মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আপনাদের জিএম রহিমুল্লাহ ছিলেন ছোট মানুষ। হয়ে গেলেন জাতীয় নেতা। তিনি কক্সবাজারবাসীর গৌরব ছিলেন। তার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ কম মেলে।

জামায়াত নেতার জানাযায় দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ অংশ গ্রহণ করে। জানাযার নির্ধারিত স্থান কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ হলে তা দশটার আগেই কানায়-কানায় পূর্ন হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, আশপাশের সড়ক উপসড়কে শোকাহত জনতা অবস্থান নেয়। যে যেখানে অবস্থান করেছেন সেখান থেকে জানাযার নামাজে অংশ নেয়।

জানাযাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি বলেন, আজকে মহানবীর জন্মদিন। এমন দিতে জিএম রহিমুল্লাহর জানাযা হচ্ছে। ভাবতে পারিনি তিনি এত কম সময়ে বিদায় নিবেন।

তিনি বলেন, ‘তিনি সবাইকে সন্তুষ্ট রেখে রাজনীতি করতেন। মানুষের যে কোন বিপদে ছুটে যেতেন।’ এমপি কমল রহিমুল্লাহ ভাইয়ের পরিবারের আশ্রয়স্থল হিসেবে একখন্ড জায়গার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।

জানাজা আগে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর ও কক্সবাজার জেলার সাবেক আমীর মোহাম্মদ শাহজাহান।

তিনি বলেন, তার ঘরে অনেক সময় চাল থাকতো না। আমাদের চাল কিনে দিতে হতো। তার মতো নির্লোভ মানুষ হয় না। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হলেও চাল-চলন ছিল সাধারণ মানুষের মতো।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, জিএম রহিমুল্লাহ আমার বন্ধু। তার সাথে আমার রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, তা ঠিক। কিন্তু তার মতো সাহসী বলিষ্ঠ নেতা আমি আর দেখিনি। ২৪ ঘন্টাই রাজনীতি, সমাজসেবা ছিল তার কাজ।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের লে.কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, আমি দায়িত্ব পালনের কারণে জিএম রহিমুল্লাহকে কাছ থেকে দেখেছি। প্রায় সময় আমার পরামর্শ নিতেন। খুবই কর্মঠ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। জনগণের সেবার মানসিকতা লালন করতেন। একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তার মাঝে প্রভাব ছিলনা। তার মধ্যে কোন বদনামিমূলক কাজ দেখিনি।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি জিএম রহিমুল্লাহর সাথে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন।

বক্তব্য রাখেন- জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, নায়েবে আমীর ঝিলংজা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল গফুর, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের নাযেবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, শিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অধ্যক্ষ নুর হোসেন সিদ্দিকী, কুমিল্লা ভিকটোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমীর সাইয়েদুল আলম, ইসলামী ঐক্যজোটের কক্সবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা সালামত উল্লাহ, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের আমীর ফজলুল্লাহ মো হাসান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কাশেম, কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এড সলিম উল্লাহ বাহাদুর, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর, জেলা শিবির সভাপতি হেদায়েত উল্লাহ, জেলা শিবির সভাপতি রবিউল আলম, শহর সভাপতি রিদুয়ানুল হক জিসান প্রমুখ।

জেলা প্রশাসের পক্ষ থেকে জানাযায় অংশ গ্রহণ করে বক্তব্য দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচ এম মাহমুদুর রহমান।

জানাযা পূর্ব সভা পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম বাহাদুর, শহর জামায়াতের সেক্রেটারী আবদুল্লাহ আল ফারুক। পরিবাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাহিদ ইফতেখার।

জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহ (৫৪) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের হোটেল সাগরগাঁওতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জিএম রহিমুল্লাহ কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক।

———০———–

জামায়াত নেতার জন্য কাঁদলেন আ.লীগের এমপি –

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি প্রয়াত জিএম রহিম উল্লাহর নামে সড়কের নামকরণ ও পরিবারের নামে জমি বরাদ্দ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল।
কমল কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের বর্তমান এমপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ছিল জিএম রহিম উল্লাহর।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জিএম রহিম উল্লাহর জানাজা শেষে সবার উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতার নামে সড়কের নামকরণের ঘোষণা দেন এমপি কমল।
একইসঙ্গে প্রয়াত জামায়াত সেক্রেটারি জিএম রহিম উল্লাহর পক্ষে উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এমপি কমল।

তিনি বলেন, রহিম উল্লাহ ভাই বড়মাপের রাজনৈতিক নেতা। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পরও ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঠিকমতো বাড়ি ভাড়া দিতে পারতেন না। তার পরিবার এখন অসহায়। তাই তার জানাজার মাঠে আপনাদের কথা দিলাম, রহিম উল্লাহ ভাইয়ের পরিবারের জন্য একটি জায়গার ব্যবস্থা করে দেব। তার নামে একটি সড়কের নামকরণেরও ব্যবস্থা করব।

এমপি কমল বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে রহিম উল্লাহ ভাইয়ের কোনোদিন কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়নি। বরং সমন্বয় করে কাজ করতাম। তার প্রশাসনিকভাবে কোনো কিছু করার প্রয়োজন হলে আমাকে দিয়ে ফোন করাতেন। আমিও তার কোনো প্রকল্প আটকে রাখতাম না। আজ পবিত্র দিনে আমরা প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছি। উনি কোনো ভুল করে থাকলে আপনারা ক্ষমা করবেন। ওনার জন্য দোয়া করবেন সবাই।

এদিকে, কমলের এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য কমল এ ঘোষণা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ব্যক্তি কমল যে কাউকে সহযোগিতা করতে পারেন। তবে কোনো ব্যক্তির নামে সড়কের নামকরণে ক্ষমতা রাখেন না তিনি। তার ঘোষণাটি নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কৌশল।

কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজিবুল ইসলাম বলেন, মুসলমান হিসেবে যে কারো জানাজায় যাওয়া সবার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন এমপি হিসেবে এই ঘোষণা রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কিছুই না। মূলত সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে (মেয়র) কয়েকবার ফোন করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার সদর উপর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জিএম রহিম উল্লাহ মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেল সাগরগাঁওতে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ছিল জিএম রহিম উল্লাহর।

গোলাম আজম খান, কক্সবাজার(দক্ষিণ)

কক্সবাজার সদরের চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহর ইন্তেকাল

জিএম রহিম উল্লাহ 

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জিএম রহিম উল্লাহ মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন। মঙ্গলবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার শহরের হোটেল সাগরগাঁওয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি মারা গেছেন বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

সাগরগাঁওয়ের ব্যবস্থাপক ও জিএম রহিম উল্লাহর শ্যালক শাহেদুল ইসলাম জানান, জিএম রহিম উল্লাহ মাঝে মাঝে হোটেল সাগরগাঁওয়ে এসে রাত যাপন করতেন। সোমবার রাতেও এসে হোটেলের চার তলার ৩১৬ নং কক্ষে ঘুমাতে যান। নিয়মিত তিনি সকালে হোটেলের বয়দের ফোন করে নাস্তা আনাতেন।

কিন্তু আজ মঙ্গলবার তিনি তা করেননি। দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠেননিও। হোটেল বয়রা কয়েকবার গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে খবর পেয়ে শাহেদুল ইসলাম এসেও দরজা ধাক্কা দিয়ে সাড়া না পেয়ে ভ্যান্টিলেটর দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন তিনি উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এরপর ২টা ৪০ মিনিটে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।

কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে জিএম রহিম উল্লাহর জন্মস্থান। তিনি ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহর মৃত্যুর খবর পেয়ে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।

Check Also

আলিপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জিয়াউল ইসলাম জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদরের আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।