নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে যশোর মুক্ত দিবস

তরিকুল ইসলাম তারেক, যশোর: ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। এই দিনটিতে দেশের প্রথম জেলা শহর হিসেবে যশোর পাক হানাদার বাহিনীদের দখল থেকে মুক্ত হয়। জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশের প্রথম স্বাধীন জেলা হিসেবে ইতিহাস গড়েন যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
গৌরবময় এই দিনটিতে যশোর জেলা প্রশাসন কর্মসূচি পালন করছে। বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দান (টাউন হল মাঠ) থেকে বিশাল একটি শোভাযাত্রা শহরের মণিহার এলাকায় অবস্থিত বিজয়স্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। এতে অংশ নেন জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করছে।
১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী যশোরের চৌগাছার সলুয়া বাজারে তৈরি করে অগ্রবর্তী ঘাঁটি। এসময় যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এ তিন দিন যশোর অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। সীমান্ত এলাকা থেকে মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমানহামলা চালায় ও গোলা নিক্ষেপ করে। ৫ ডিসেম্বর থেকে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী পালাতে শুরু করে। এদিন সকাল ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচন্ড লড়াই হয়।
বিকেলেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝে যান, যশোর দুর্গ আর কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। বেনাপোল অঞ্চলে দায়িত্বরত লে. কর্নেল শামসকে নওয়াপাড়ার দিকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার হায়াত। নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে হায়াত নিজে পালান খুলনার দিকে। পালানোর সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্নস্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের মুখোমুখি লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাসে ঢুকে তা দখলে নেয়।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘যশোর গেজেটিয়ার’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৬ তারিখ সন্ধ্যা হতে না হতেই পাকবাহিনীর সবাই যশোর ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আট নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর ও মিত্র বাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন। তখনো তারা জানতেন না যে, যশোর ক্যান্টনমেন্ট শূন্য। তারা বিস্মিত হন কোনো প্রতিরোধ না দেখে।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর জেলার সাবেক কমান্ডার রাজেক আহমদ বলেন, ‘৬ ডিসেম্বরেই আমরা যশোর শহর থেকে শত্রু সেনাদের বিতাড়িত করি। কিন্তু, সেদিন যশোর শহর ছিল জনশূন্য। ফলে পরদিন ৭ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল বের হয়।’
স্বাধীনতার পর থেকে ৭ ডিসেম্বরকেই যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হতো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদদের দেওয়া তথ্যমতে ২০১০ সাল থেকে ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
৮ ডিসেম্বর যশোর শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় মুক্তিবাহিনী। ১০ ডিসেম্বর প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক ওয়ালিউল ইসলাম। ১১ ডিসেম্বর টাউন হল মাঠে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরে হয় জনসভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, যশোরের এমপিএ অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। মুক্ত যশোরে অফিস-আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় ১২ ডিসেম্বর।#

Please follow and like us:

Check Also

বাবার ইমামতিতে ছেলের জানাজা

চাঁদপুর শহরের হাজি মহসিন রোডের রেলওয়ে নূরানি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাও. আ ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।