সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগরে ধানের শীর্ষের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলামকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ # থানা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সরবরাহ না করায় জামিনের আবেদন নাকচ: জামায়াতের প্রতিবাদ

# আচারণ বিভি লঙ্ঘনের দাবী ২০ দলের

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা   থানা থেকে প্রযোজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ না করায় জামিন ধরতে পারিনি সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগর আসনে ২০ দলীয় জোট মনোনিত জামায়াতের প্রার্থী মুক্তি যোদ্ধা গাজী নজরুল ইসলামলের আইনজীবি। গতকাল সোমবার সাতক্ষীরা আমলীয়-৫ আদালতে গাজী নজরুল ইসলামলের পক্ষে জামিন চেয়ে তার আইনজীবি আবেদন করেন। এসময় শ্যামনগর কোটের জিআরও হাফিজুর রহমান ৫৪ ধারধায় আদালতে পুটআপ দিলে আদালত তা না মঞ্জুর করে। ফলে গাজী নজরুল ইসলামলের পক্ষে জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
এর আগে গত রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শ্যামনগর উপজেলার ইসলামপুর গোডাউন মোড়ে গাজী নজরুল ইসলামের বসত বাড়ি থেকে তাকে আটক করে শ্যামনগর থানা পুলিশ। পুলিশের দাবী তার বিরুদ্ধে একাধীক নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা রয়েছে।
পরে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোন মামলায় ওয়ারেন্ট না থাকায় ৫৪ ধারায় তাকে আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
একই সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতের সাবেক উপজেলা আমির মাওলানা আবদুল বারী, পদ্মপুকুর ইউপি জামায়াতের আমির আবদুর রব এবং গাজী নজরুলের প্রস্তাবক জামায়াত নেতা মো. বারী।
গাজী নজরুল ইসলামকে ঠিক কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশের স্পষ্ট ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। (ওসি) আবুল জানান, নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ১২টি মামলায় জিএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে, পাঁচটি মামলায় আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে ও চারটি মামলায় শেখ আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এসব পরোয়ানা পাওয়া গেছে। পরোয়ানার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আবদুর রবের বিরুদ্ধে মামলা বা পরোয়ানা আছে কি না, তা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারেননি।
শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর জানান, সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগর আসনে ২০ দলীয় জোট মনোনিত জামায়াতের প্রার্থী মুক্তি যোদ্ধা গাজী নজরুল ইসলামলের বিরুদ্ধে কোন মামলায় ওয়ারেন্ট না থাকায় পুলিশ ৫৪ ধারায় কোটে চালান দেয়। এতে প্রমানিত হয় আটককৃতদের কারোর বিরুদ্ধে কোন গ্রেফতারি পরওয়ানা ছিল না।
তবে গাজী নজরুল ইসলারে স্ত্রীর দাবী তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্ট ভুক্ত মামলা ছিল না।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না। তাঁদের পোস্টার ও প্রচারপত্র লুট করে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। নির্বাচনি প্রচার মাইক ভাংচুর করা হচ্ছে। তিনটি মাইক ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে বিএনপির প্রার্থী জামায়াতের নেতা নজরুল ইসলাম তাঁর ইসমাইলপুর গ্রামে বাড়িতে রবিবার দুপুরে কয়েকজনকে নিয়ে পরামর্শ করছিলেন। বেলা আড়ইটার দিকে শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনিছুজ্জামানের নের্তত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। একপর্যায়ে নজরুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আজিজুর রহমান দাবি করেন, তাঁদের জানামতে যে কয়টি মামলা রয়েছে সব কটিতে গাজী নজরুল ইসলাম ও আব্দুল বারী জামিনে আছেন। তিনি গতকাল মুঠোফেনে আরো জানান, গাজী নজরুল ইসলামসহ আটককৃত জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্ট না থাকায় পুলিশ ৫৪ ধারধায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। এমনকি আদালতে আটকের বিস্তারিত কোন তথ্য ও পাঠানি শ্যামনগর থানা। ফলে ৫৪ ধারণ জামিন ধরাও সম্ভব হয়নি। যা নির্বাচন কমিশন,উচ্ছ আদালত ও আচারণ বিধির স্পষ্ট লঙ্গন।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২২ জনের মতো জামায়াত নেতা ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। নিবন্ধন হারানোর পর জোটসঙ্গী বিএনপির প্রতীক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
গাজী নজরুল ১৯৯১ সালে জামায়াতের এবং ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির গোলাম রেজার কাছে সিমীত ভোটের ব্যবধানে।
এবার ধানের শীষের প্র্রার্থী গাজী নজরুলের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম জগলুল হায়দার। তিনি আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য।
এবারের নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থীদের মধ্যে নজরুলের আগে গ্রেফতার হন গাজীপুরে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল হক মিলন। তাকে পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
ভোটের সময় গ্রেপ্তার-হয়রানি না করার পদক্ষেপ নিতে ইসিতে বার বার আবেদন জানিয়ে আসছে বিএনপি।কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে তাদের দাবী।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০৮ সাতক্ষীরা-০৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম, শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল বারী, ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থনকারী শেখ আব্দুল বারীকে গ্রেফতার করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার ও সেক্রেটারী শেখ নুরুল হুদা । বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম তার শ্যামনগর উপজেলা ঈসমাইলপুর মোড়স্থ’ বাসভবনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল বারী ও প্রার্থীর সমর্থনকারী শেখ আব্দুল বারীকে নিয়ে যখন বিজয় দিবসের আলোচনা ও মতবিনিময় সভা শেষে দুপুর ২.৩০ মিনিটে মধ্যাহ্ন ভোজের
প্রস্ততি নিচ্ছিলেন তখন ১০/১৫ জন পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। এটা নির্বাচনের বিধির লংঘন ও জনমনে আতঙ্ক তৈরী করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ। এভাবে সাতক্ষীরার নির্বাচনের পরিবশে একতরফাভাবে নষ্ট করা হচেছ। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় অবিলম্বে গাজী নজরুল ইসলামসহ সকলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী করেন। সাথে সাথে আতঙ্কের পরিবর্তে উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণ অবাধে তাদেও ভোটাধীকার প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি
কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের উদাত্ত আহ্বান জানান।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।