জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের আইনগত সুযোগ নেই: ইসি # ২৫ নেতার প্রার্থিতা বহাল

ক্রাইমবার্তা ডেক্সরিপোর্টঃএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জামায়াতের ওই প্রার্থীরা ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে ছিলেন ২২ জন ও স্বতন্ত্র থেকে ৩ জন। হাইকোর্টের রুলের প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় ইসির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চার ব্যক্তির করা একটি রিট আবেদন গত মঙ্গলবার শুনানি করেন হাইকোর্ট।

শুনানি শেষে ওই নেতাদের প্রার্থিতার বিষয়টি ইসিকে তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলে হাইকোর্ট।

সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আদালত আমাদের তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছিলেন। আমরা আজ নিষ্পত্তি করেছি। কাল আদালতকে জানাবো।’

রিট আবেদনটি করেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. আলী হোসেন, মো. এমদাদুল হক ও হুমায়ুন কবির। রিটে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ২২ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনজন জামায়াত প্রার্থীর ভোটে অংশগ্রহণের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়।

আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।

সোমবারের শুনানিতে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ২০০৯ সালে রিট করা হয়। পরে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।

ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধান পরিপন্থী। রায় এখনও বহাল।

ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রার্থী হওয়া ২২ জন:

১. ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান

২. সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান

৩. খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ

৪. কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

৫. খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরোয়ার

৬. কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ

৭. পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম

৮. পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন

৯. যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন

১০. ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম

১১. দিনাজপুর-১ আবু হানিফ

১২. দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম

১৩. নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম

১৪. গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান

১৫. সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক

১৬. সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম

১৭. পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী

১৮. নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান

১৯. ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান

২০. বাগেরহাট-৩ ওয়াদুল শেখ

২১. বাগেরহাট-৪ আসনে আবদুল আলীম

২২. চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।

স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হওয়া ৩ জন:

২৩. চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল

২৪. চট্টগ্রাম-১৬ জহিরুল ইসলাম

২৫. পাবনা-১ আসনে নাজিবুর রহমান মোমেন।

—————-০————–

জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের আইনগত কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ কমিশন সভায় তাদের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনের ওপর আলোচনা করে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছেন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ। তবে আদালতের রায়ে যেসব আসনে বিএনপি প্রার্থী শূন্য হয়েছে ওইসব আসনে বিকল্প প্রার্থী দেয়া বা পুন:তফসিলের যে দাবি জানিয়েছে দলটি তা আমলে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত ১৭ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেছেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী।

সোমবার বিকালে রিটের পর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির সময় ধার্য করেন। রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনহীন একটি দলের প্রার্থীরা কীভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হন- এ যুক্তিতে রিটটি দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিকাল ৪টায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির সময় ধার্য করেন।

এদিনের শুনানিতে কেবল তানিয়া আমীরই বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০-দলীয় শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসন দিয়েছে বিএনপি। যদিও জামায়াতকে আসন বণ্টনের শুরুতে ২৫টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা ছিল।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট করে দুটি আসনে জয়ী হয়। আর জোটের সিদ্ধান্তে দশম নির্বাচন বয়কট করে দলটি।

এরআগে, গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংগ্রহ করে ইসির আইন শাখা। ওই রায়ের ভিত্তিতেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার অনুমোদন চেয়ে কমিশনে ফাইল তোলা হয়। এরপরই তা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারি মুদ্রণালয়ে পাঠানো হয়।

ইসির প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর ৬৩০/২০০৯ এর প্রদত্ত রায়ে আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৯০(এইচ) এর উপধারা ৪ অনুযায়ী নিবন্ধন বাতিল করা হলো।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন পেয়েছিল। নিবন্ধন নম্বর-১৪।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। এরপর ২০১৩ সালের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করেছিল জামায়াত। ওই আবেদনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।

প্রসঙ্গত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের ২২ জন নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পরোয়ার, কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ, পাবনা-৩ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ আসনে মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ আসনে মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ আসনে ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আসনে আবদুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।