ঐক্যফ্রন্ট প্রচার জোরদার করছে সারাদেশসহ রাজধানীতে

ক্রাইমবার্তা ঢাকাঃ রাজধানী ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আজ থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি বুঝে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নামার অপেক্ষায় রয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণায় জনতার ঢল নামবে বলে আশা করছেন ঐক্যফ্রন্ট্রের নেতাকর্মীরা। যেকোনো পরিস্থিতিতে ভোটের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে থাকার প্রত্যয়ের কথাও বলছেন ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনাকারীরা।

গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের গণসংযোগ লক্ষ করা গেছে। লিফলেট বিতরণ খণ্ড মিছিলে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ভীতি মাথায় নিয়ে মাঠে নামা প্রার্থীদের ওপর প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় গতকাল দুপুরে ঢাকা-৯ আসনে আফরোজা আব্বাসের ওপর তৃতীয়বারের মতো হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকালে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় গণসংযোগ করেছেন ঢাকা-১১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা। সকাল ১০টায় ঢাকা-৪ এ শ্যমাপুর লাল মসজিদ সকাল ১০টা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

অন্য দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারণা আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীজুড়ে এখনো এককভাবেই মহাজোটের প্রার্থীদের নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের পোস্টারই লক্ষ করা যাচ্ছে। নির্বাচনী অফিসও চোখে পড়ছে কেবলই নৌকা সমর্থকদের। মাইকিং এবং নির্বাচনী অফিস থেকে নির্বাচনী গান নৌকা মার্কারই এককভাবে চলতে দেখা গেছে।
রাজধানীর কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কিছু এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটলেও মূলত ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রধান বাধার কারণ হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ কাউকেই ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। ধানের শীষের প্রচারণায় অংশ নিতে দেখলেই আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রচারণায় অংশ নিতে নিষেধ করছে। তা সত্ত্বেও অফিস, পোস্টারিং, মাইকিং ছাড়াই ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদারের চেষ্টা করছে ঐক্যফ্রন্ট। সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রচারণা আরো জোরদার হবে এবং মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবে বলে মনে করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তার ছেলে তানভীর আহমেদ নবীনের কাছে নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আসলে কিছুই করতে পারছি না। আমাদের একটা পোস্টারও দেখবেন না। কোনো অফিস করতে দেয়া হয়নি। আমাদের ওপর ইতঃপূর্বে মীর হাজিরবাগে হামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে প্রতিদিন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মমিন উল্লাহ মমিনকে শনিবার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমাদের বাসার দুই পাশে পুলিশ পাহারা বসিয়েছে। ২৪ ঘণ্টা বসে থাকে ২০-৩০ জন করে। বাসায় নেতাকর্মীরা যেতে-আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারা আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন। জনসংযোগে গেলে যারাই হাত মেলাচ্ছে গণসংযোগ শেষ হওয়ার পর সাথে সাথে তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের বাধার ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ তো নির্বাচন করছে না, করছে তো পুলিশ। আমরা নির্বাচন করছি পুলিশের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৭৮টি মামলায় আমি জামিনে থাকার পরও নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারছি না। যেখানে আমাদের লোক নামছে পুলিশ বাধার সৃষ্টি করছে, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আমরা পোস্টার লাগাতে গেলেই আহত করা হচ্ছে। এ জন্য মেডিক্যাল রোড ছাড়া আর কোথাও ধানের শীষের পোস্টার নেই। তিনি বলেন, ৩০ তারিখে ভোট দেয়ার জন্য মানুষ বসে আছেন। আমরা কেন্দ্র পাহারা দেবো, কেন্দ্রে থাকব।

ঢাকা-৫ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তার মেয়ের জামাই রনি সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণসংযোগ করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়। বলে, এ এলাকায় সমস্যা, চলে যান। প্রচারণায় বাধা দেয়। তিনি বলেন, আমাদের ভাঙ্গা প্রেস এলাকায় আবদুন্নবী টাওয়ারে প্রধান নির্বাচনী অফিস হলেও পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে সেখান থেকে কার্যক্রম চালানো যায় না। এ ছাড়া নবীনগরে আরেকটি সাব অফিস আছে সেটিরও একই অবস্থা। আর কোথাও অফিস করা যায়নি। পোস্টার লাগাতে গেলে পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে যায়। তিনি জানান, আবদুন্নবী টাওয়ারে একটি দোয়া মাহফিল ছাড়া কোনো সভা-সমাবেশ এখন পর্যন্ত করা যায়নি। তবে সামনে একটি বড় জনসভার চিন্তা আছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা যেখানে যাচ্ছি মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করছি। সুযোগ পেলে মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাবে। তিনি বলেন, মানুষ তাকিয়ে আছেন সেনাবাহিনীর দিকে। আর্মি নামার পর মানুষ যদি দেখে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক তাহলে মানুষ স্রোতের মতো ভোটকেন্দ্রে যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে আমাদের প্রচার-প্রচারণাও আরো জোরদার হবে।

এ দিকে ঢাকা-৫ আসনে মহাজোট প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তার ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা (স্বজল) নয়া দিগন্তকে বলেন, এমনিতেই নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। আসলে তিন-চার দিন গেলেই নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র দৃশ্যমান হবে। প্রতিপক্ষের পোস্টার ও তৎপরতা না দেখার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আসলে এখানে বিএনপি সেভাবে গোছানো না হওয়ার কারণে এই অবস্থা হতে পারে। তবে তাদের এলাকায় ভোট আছে এটা সত্য। প্রার্থী যেখানে প্রচারণায় যাচ্ছে সেখানে কিছু লোকসমাগম হচ্ছে। তবে আমরাও তাদের বড় ধরনের প্রচার-প্রচারণা দেখছি না। পুলিশের হয়রানির ব্যাপারে তিনি বলেন, পুলিশ সুনির্দিষ্ট মামলায় অ্যারেস্ট করা স্বাভাবিক। তবে আমাদের এলাকায় কোনাে গায়েবি মামলার ঘটনা নেই। আমরা তো তাদের কোনো বাধা দিচ্ছি না। এখানে আমাদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান অদৃশ্যমান কোনো হুমকি নেই। তাদের পোস্টার লাগালে পোস্টার থাকে নাথÑ এই অভিযোগ মিথ্যা। আসলে বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে আমাদের পোস্টারও নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা তিনটি পথসভা ও দু’টি জনসভা করেছি। আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের আসনে তা আছে আমি বলতে পারি। তারা প্রচারণা চালাতে পারছে না, মাঠে নামতে পারছে না, জনসমক্ষে আসতে পারছে না, এটা তাদের ব্যর্থতা। পুলিশের ধরপাকড়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী থানায় আগের মতো সেভাবে ধরপাকড় হচ্ছে না।

ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় পুলিশের বাধা, হয়রানি ও প্রতিপক্ষের হামলার অভিযোগ করে ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকার ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মির্জা আব্বাস শনিবার অভিযোগ করেন, বাড়ির চার পাশে অচেনা লোকের নজরদারি চলছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় কোনো হামলার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। বাড়ির চার পাশে সন্দেহজনক লোকদের পাহারা এত বেশি যে, অরাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা সাংবাদিকেরা বাসায় প্রবেশ করলেও তাদের ওপর নজর রাখা হয়।

গতকাল আফরোজা আব্বাসের নির্বাচনী প্রচারণায় মানিকনগর এলাকায় তৃতীয়বারের মতো হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে গত ১২ ও ১৮ ডিসেম্বর তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে পৃথক হামলার ঘটনা ঘটে।

ঢাকা-১৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ডা: শফিকুর রহমানের প্রচারণা কাজে বাধা, গ্রেফতার ও গুমের অভিযোগ করা হয়েছে তার নির্বাচনী সেলের পক্ষ থেকে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেখানে এখনো পর্যন্ত দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়েছেন নারীসহ ১১ জন।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।