যশোর সদরে আ’লীগ এমপি ও কয়েক নেতার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা

যশোর সংবাদদাতা : যশোর শহরে গত শনিবার গভীর রাতে সদরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাসভবনসহ আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ৯টি বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা ও গুলীবর্ষণ করেছে সন্ত্রাসীরা। বোমা হামলার জন্য আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের নেতৃবৃন্দ একে অন্যকে নানাভাবে দোষারোপ করছেন। পুলিশ বলছে, এ ঘটনা আওয়ামী লীগের পরস্পর বিরোধী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখনো পর্যন্ত পুলিশ আটক করতে পারেনি। কোন পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরও করেনি।
এ হামলার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের ওসি অপূর্ব হাসান। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। এদিকে বোমা হামলা, গুলীবর্ষণ ও ভাঙচুর ঘটনায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরে টানটান উত্তেজনা রয়েছে। গতকাল রোববার দুটি পক্ষই শহরে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিল থেকে বোমাবাজরা হুশিয়ার এমন শ্লোগান দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওইসব স্থানে বোমা হামলা, গুলীবর্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রাত দেড়টার দিকে শহরের কাজীপাড়াস্থ ডায়মন্ড প্রেসের বিপরীতে অবস্থিত সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাসভবনে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সংসদ সদস্যের বাড়ি সংলগ্ন তার এক অনুসারী জানান, প্রথমে একটি মোটরসাইকেলে ২ জন এসে পর পর তিনটি বোমা নিক্ষেপ করেন। এর মধ্যে ভবনে লেগে দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। তিনি জানান, মোটরসাইকেল আরোহীরা বোমা হামলা চালানোর পর পরই সেখানে একটি জিপগাড়ি আসে। এরপর মোটরসাইকেল ও জিপগাড়ি নিয়ে আরোহীরা চলে যান। এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ জানান, ঘটনার সময় কাজী নাবিল আহমেদ সামনে তার আরেকটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ সুপার তার বাড়িতে এসে  বোমা হামলার ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি বলেন, কাজী নাবিল আহমেদের বাড়িতে তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ছাড়াও ৩ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করা হয়েছে। এ হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। কাজী নাবিল আহমেদ এ নিয়ে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু যারা মনোনয়ন পাননি তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত বলে তিনি মনে করেন। কারণ তাদের (অন্য পক্ষের উদ্দেশে) চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন ভয় পাচ্ছেন তারা। এ জন্য তারা তাদের (সংসদ সদস্য পক্ষীয়দের) দুর্বল করতে চান। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের চাচাত ভাই যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর কাজীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার বাড়িতে শনিবার দিবাগত রাতে বোমা হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু জানান, একটি মোটরসাইকেলে দু’জন এসে তার বাড়িতে বোমা হামলা চালান। প্রাচীর ঘেরা তার বাড়িতে তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, এখনো তাদের শনাক্ত করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের আবাসিক হোটেল জাবীর ইন্টারন্যাশনালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। শংকরপুর সন্ন্যাসী দিঘিরপাড়স্থ চাকলদার ফিলিং স্টেশনে রাতে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালিয়েছে। তারা সেখানে ভাঙচুরও করেছে।
শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমাম হাসান লাল জানান, শনিবার দিবাগত রাতে তার ষষ্ঠীতলার বাড়িতেও সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালিয়েছে। তারা তার বাড়িতে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এর আগেরদিন শুক্রবার রাতেও তার বাড়িতে অনুরূপ বোমা হামলা চালানো হয়েছিলো বলে তিনি অভিযোগ করেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল খান জানান, শনিবার গভীর রাতে তার বাড়ির ছাদে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ জানান, বারান্দীপাড়া কদমতলায় জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টগর ও কারবালা এলাকায় যুবলীগ নেতা রাজিবুল আলমের বাড়িতেও শনিবার গভীর রাতে বোমা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তিনি আরো জানান, যুবলীগ নেতা রাজিবুল আলমের বাড়িতে বোমা হামলার পাশাপাশি গুলীবর্ষণও করা হয়েছে। এর আগেরদিন শুক্রবার রাতেও রাজিবুল আলমের বাড়িতে বোমা হামলা ও গুলীবর্ষণ করা হয়েছিলো।
অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, শনিবার রাতে বারান্দী মোল্লাপাড়ায় ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের বাড়ি ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। পরদিন সকালেও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা রাসেলের অফিস ভাঙচুর করে। এর আগে শীর্ষ এক সন্ত্রাসী রাসেলকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছিলো। তিনি বলেন, শনিবার রাতে সন্ত্রাসীরা নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়ায় শ্রমিক নেতা আজিজুল আলম মিন্টুর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আনোয়ার হোসেন বিপুল অভিযোগ করেন, তাদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য একটি পক্ষ এ কাজ করছে। কিন্তু যতই হামলা চালানো হোক না কেন তাদের ভিত কিন্তু এতো দুর্বল নয়।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের কাছে মোবাইল ফোন করা হলে তিনি রিসিভ না করায় নেতাকর্মীদের বাড়িতে বোমা হামলার বিষয়ে তার কোন মন্তব্য জানা যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের কাছে মোবাইল ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, ‘৫-৬ জায়গায় নিজেরা নিজেরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের হিসেবে তারা নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।’ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বোমা হামলার ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলার প্রতিবাদে আওয়াম লীগের দুটি পক্ষ রোববার শহরে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ও পৌর কাউন্সিলর হাজি সুমনের নেতৃত্বে গাড়িখানা রোড থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিল থেকে বোমাবাজরা হুঁশিয়ার সাবধান ইত্যাদি শ্লোগান দেয়া হয়। এরপর বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরে পাল্টা আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।