ভারত ত্যাগ করে চীনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে মিজোরা!

উত্তরপূর্ব ভারতের সব রাজ্যে যখন বাংলাদেশ থেকে আসা কথিত হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রচেষ্টার বিরোধীতায় প্রতিবাদ চলছে, তখনই মিজোরাম রাজ্যে প্রতিবাদ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমাদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিরুদ্ধে।

মিজোরামের রাজধানী আইজলে সম্প্রতি এরকমই একটা মিছিলে হাজার তিরিশেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল, যেখানে প্রচুর সংখ্যায় দেখা গেছে একটা পোস্টার : ‘বাই বাই ইন্ডিয়া, হ্যালো চায়না’।

তাহলে কি নাগরিকত্ব বিলের ইস্যুতে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইছে মিজোরা?

সেখানকার রাজনৈতিকভাবে অতি প্রভাবশালী এন জি ও সংগঠন ইয়াং মিজো এসোসিয়েশনের প্রধান লালমাৎসুয়ানা বলছিলেন, “মিজোরামের ভারতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের পূর্বপুরুষরা নিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধীতার প্রশ্নই নেই, আর চীনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়াও অবাস্তব। তবে দিল্লির অভিভাবকরা যদি বারে বারে আপত্তি জানানো স্বত্বেও বিলটি পাশ করানোর দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে ছাত্র যুবকদের অভিমান তো হতেই পারে।”

অন্যান্য উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যেখানে ‘ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশ থেকে চলে আসা হিন্দুদের’ নাগরিকত্ব দেয়ার বিরোধিতা করা হচ্ছে, সেখানে মিজোরামে বৌদ্ধ চাকমাদের বিরুদ্ধে কেন নেমেছেন মিজোরা?

মিজো সংগঠনগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষা যে চাকমা স্বশাসিত পরিষদ রয়েছে, সেখানে বিপুল সংখ্যক চাকমা বাংলাদেশ থেকে মিজোরামে চলে এসেছেন। নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে গেলে এই ‘অবৈধ চাকমারাও’ ভারতের নাগরিক হয়ে যাবেন।

“চাকমাদের জন্য স্বশাসিত জেলা পরিষদ তৈরীর সময়েই আমরা মিজোরা আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু ওই স্বশাসিত অঞ্চলে নিয়মিতই বাংলাদেশ থেকে চাকমাদের অনুপ্রবেশ ঘটে। ৬১-এর জনগণনায় খুবই অল্প কয়েকজন চাকমা ছিলেন, আর বর্তমানে তাদের দাবি অনুযায়ীই প্রায় এক লক্ষ চাকমা রয়েছেন সেখানে। এই সংখ্যাটাতো আর শুধুমাত্র বংশবৃদ্ধির কারণে হতে পারে না! এদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে চলে আসা মানুষ,” বলছিলেন লালমাৎসুয়ানা।

তার আরো অভিযোগ স্বশাসিত পরিষদ এলাকায় সব চাকরি চাকমাদেরই দেয়া হয়, মিজোরা জমি কিনতে পারে না আইনত।

মিজোরামে বসবাসকারী চাকমারা অবশ্য বলছেন, সরকারের তরফেই বারে বারে বলা হয়েছে যে সে রাজ্যে কোনো চাকমা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে এসে বসবাস করছে না!

অল ইন্ডয়া চাকমা সোশ্যাল ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ চাকমা বলছিলেন, ” এটা আসলে মিজোদের দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা চাকমা বিরোধী নীতির অংশ। পুরো সরকারী কাঠামো আর মিজো এনজিওগুলোর এটা একটা মিথ্যা প্রচার। চাকমাদের গ্রাম থেকে উৎখাত করা হচ্ছে, শিক্ষার অধিকার দেয়া হয় না, আমাদের বাড়ি থেকেও তাড়িয়ে দেয়া হয় রাজধানী আইজলে। এরা আসলে চায় ৭৩ সালে তৈরী হওয়া স্বশাসিত পরিষদটা যাতে ভেঙ্গে দেওয়া যায় ।”

চাকমা সংগঠনগুলোর আরো অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে চাকমারা নয়, মিয়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে মিজোদেরই স্বজাতি ‘চিন’ সম্প্রদায়ের মানুষ। নিজের সম্প্রদায়ের মানুষ বলে মিজোরা সেটা নিয়ে আপত্তি তুলছে না।

সেটা যে ঘটছে কিছু সংখ্যায়, সেটা স্বীকার করছিলেন লালমাৎসুনায়ানাও। তবে সংখ্যায় সেই অনুপ্রবেশ কথিত চাকমা অনুপ্রবেশের তুলনায় নগণ্য, এমনটাই মিজো নেতৃত্বের মতো।
সূত্র : বিবিসি

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যা বললেন ডিবির হারুন

ভুয়া সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।