মুসলিম নারীরা কেন হিজাব পরেন?

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:মাত্র ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন নাজমা খান। কিন্তু মাথায় স্কার্ফ পরার কারণে নিউ ইয়র্কে তাকে অনেক বছর তিরস্কারের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই ২০১৩ সালে তিনি বিশ্ব হিজাব দিবস পালন শুরু করেন। এ দিনটিতে মুসলিম ও অমুসলিম নারীরা মাথায় স্কার্ফ পরার রীতি চর্চা করেন। ১লা ফেব্রুয়ারি এ দিবসটি পালন করা হয় ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সংহতি ও সমর্থন প্রকাশের জন্য। নাজমা বলেছেন, একজন মুসলিম অভিবাসী হিসেবে আমি নারীদের তাদের পোশাক বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় অধিকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। হিজাব তো শুধু ধর্মীয় কারণে নারীরা পরেন না। এর আরো কিছু কারণ আছে, যা সময়ের সঙ্গে, সামাজিকতার সঙ্গে পরিবর্তন হয়।

হিজাব পরা কি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা?
এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা পাওয়া যায় না। তবে পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) তার স্ত্রীদের বোরকা পরার রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। তবে বিজ্ঞজনরা স্পষ্ট করে বলেন নি এই বর্ণনা কি শুধু মহানবীর (স.) স্ত্রীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নাকি সব মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অনেকের মতে, পুরুষদের যৌন লালসা থেকে নারীদের নিরাপদ রাখার একটি উপায় হলো এমন পোশাক পরা। ইতিহাসে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, বিভিন্ন ধর্মে নারীদের মাথা ও শরীর ঢেকে রাখার এমন প্রচলন পাওয়া যায়।
তবে মাথায় স্কার্ফ পরার সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক আছে। বহু নারী, যারা এভাবে মাথা ঢেকে রাখেন তারা এ নিয়ে কথা বলেছেন। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সঁপে দেয়া হয়।
ওদিকে ফরাসি ও বৃটিশ ঔপনিবেশিকরা মুসলিম নারীদের বোরকা পরিহার করে ইউরোপিয়ান নারীদের অনুকরণ করতে উৎসাহিত করেছে। পক্ষান্তরে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রার্চের দেশগুলোতে জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে বোরকা।
বর্তমানে অনেক নারী তাদের জাতিগত পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে প্রকাশ করতে হিজাব পরিধান করেন। এমনটা বেশি ঘটে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে, যেখানে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে ইসলামভীতি।
২০১৮ সালের বিশ্ব হিজাব দিবসে ফেসবুকে কলাম্বিয়া কলেজের শিক্ষার্থী তোকা বদরান লিখেছেন, আমি এই স্কার্ফ পরি। এর কারণ, যখন শিশু ছিলাম তখন সামাজিকভাবে বিব্রতকর অবস্থার শিকার হয়েছিলাম। লজ্জিত হয়েছিলাম। ধর্মীয় ও আমার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিষয়ে আমাকে সচেতন করা হয়েছিল। আমাকে বলা হয়েছিল, মুসলিমরা সন্ত্রাসী হয়। মুসলিমরা সহিংসতা ও নিষ্পেষণকে অনুমোদন দেয়। তাই আমি যতক্ষণ আমার ঐতিহ্যের প্রতীক ধরে রাখবে ততক্ষণ আমাকে স্বাগত জানানো হবে নাÑ এমনটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন মুসলিম নারীরা মাঝেমধ্যে হিজাব পরেন। এটা দিয়ে তারা বোঝাতে চান তাদের ধর্মীয় আনুগত্য। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত সব মার্কিনিই যে খ্রিস্টান এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে। তারা এ পোশাক পরে সেই ধারণাকে দূরীভূত করতে চান। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ১৩ ভাগই হলেন মুসলিম।
আবার অনেকে ক্ষেত্রে বহু নারী তাদের সৌন্দর্য্যকে ঢেকে রাখার বিরোধিতা করে মাথায় স্কার্ফ পরেন। কারণ, তাদের সেই সৌন্দর্য্যকে প্রদর্শন করার দাবি রয়েছে। এমন নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, পুরুষদের দাবির প্রেক্ষিতে এসব পোশাক সরিয়ে ফেলা সমান অধিকার নয়।
গবেষকদের মতে, যেসব নারী হিজাব পরে তারা মনে করেন নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের চেহারার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতা দেখা। তাই হিজাব হলো তাদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির একটি মাধ্যম। কিন্তু পশ্চিমা দেশে, যেসব নারী স্কার্ফ বা হিজাব পরেন তাদের কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শেষ পর্যন্ত, কিছু নারীর কাছে মাথায় স্কার্ফ পরা হলো স্বস্তিকর। কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় এবং প্রকাশ্য স্থানে বিব্রতকর মন্তব্যের শিকার হওয়া কমিয়ে দেয় এমন পোশাক।
(অনলাইন ইনকুইরার ডট নেটে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ) 

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।