মেঘনা ডিপোর ৬০ হাজার লিটার জ্বালানী তেল গায়েব ইনচার্জ সাসপেন্ড, তদন্ত কমিটি গঠন

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ     নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে মেঘনা কোম্পানির ডিপো থেকে প্রায় ৬০ হাজার লিটার জ্বালানী তেল চুরির অভিযোগে ডিপো ইনচার্জ এসএ খানকে সাসপেন্ড করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

ঘটনা তদন্তে মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বিপিসি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এঘটনা নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে তোলাপাড় শুরু হয়েছে।

মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর সাইফুল্লা খালেদ বলেন, বিপিসি থেকে হঠাৎ করে ৩১ জানুয়ারি গোদনাইলের ডিপোতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ডিপোর ট্যাঙ্কার মেপে ৬০ হাজার লিটার তেল কম পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ডিপো ইনচার্জ এসএ খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য মেঘনা ডিপো থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে বাকিটা জানা যাবে।

গোদনাইল মেঘনা ডিপোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে বিপিসির একটি দল ডিপোতে আসে। তারা সরাসরি ডিপোর রিজার্ভ ট্যাঙ্ক পরিমাপ ও তেল খালাসের অপেক্ষায় থাকা জাহাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার লিটার তেল কম পাওয়া যায়। বিপিসি কর্মকর্তারা দেখতে পান জাহাজ থেকে স্থানীয় কয়েকজন ড্রামে করে অবৈধভাবে তেল নামাচ্ছে।

এ সময় স্থানীয় ট্যাঙ্কলরি মালিক সমিতির এক কর্মকর্তার সাথে বিপিসি কর্মকর্তাদের বাগ্বিত-া হয়। মূলত চট্টগ্রাম থেকে ওই জাহাজ তেল নিয়ে গোদনাইল ডিপোতে এসেছিল। তেল থাকার কারণে জাহাজের ৩২টি জায়গা সিল করা ছিল। কিন্তু বিপিসি দল অপেক্ষমাণ জাহাজটির প্রায় ৮টি সিল ভাঙা দেখতে পান। আর ওই জায়গাগুলো দিয়েই তেল চুরি করা হচ্ছিল। যেসব সিল ভাঙা ছিল সেটি ডিপো ইনচার্জের অনুমতি ছাড়া সাধারণত জাহাজ মালিকরা ভাঙতে পারেন না। এ অবস্থায় বিপিসি কর্মকর্তারা জাহাজের লোকজনের কাছে জানতে চান, কার নির্দেশে সিল ভাঙা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তখন জাহাজের কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি।

স্থানীয় সূত্র বলছে, গোদনাইলের মেঘনা ডিপোকে কেন্দ্র করে তেল চুরির একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার তেল চুরি করে তা বিক্রির টাকা এ সিন্ডিকেটের লোকজন ভাগ করে নেয়। দেড় থেকে দুই মাস আগে ডিপো থেকে প্রায় ৪৩ লাখ টাকার মবিল গায়েব হয়ে যায়। সেই টাকা ডিপো ইনচার্জ এবং স্থানীয় নেতারা সেখানে মাস্টার রুলে চাকরি করে এমন ১১ জনের কাছ থেকে জোর করে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেন।

ডিপোর একাধিক কর্মকর্তাও বলছেন, এ ডিপোকে ঘিরে ১০-১৫ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। যাদের প্রত্যেকে কোটি কোটি টাকার মালিক।

জানা যায়, গোদনাইলে মূলত কয়েকটি প্রক্রিয়ায় তেল চুরি হয়। এক কারসাজি করে সরাসরি জাহাজ থেকে তেল নামিয়ে তা পাচার করা হয়। মাঝেমধ্যে ডিজেল বা ফার্নেস তেলের সাথে কনডেনসেট বা বাংলা তেল মিশিয়েও চুরি করা হয়। এ ছাড়া বিক্রির সময় প্রতিটি গাড়িতে তেল কম দিয়ে তা চুরি করা। গাড়ি বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময়ও একটি চক্র রাস্তা থেকে তেল চুরি করে।

বিপিসি পরিচালক সারোয়ার আলম বলেন, গোদনাইল ডিপোর ইনচার্জকে বহিষ্কারের একটি চিঠি দেখেছি। অন্য কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিন পারভেজ বলেন, তেল চুরির ঘটনায় ডিপোর একজনকে বহিষ্কারের খবর শুনেছি।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।