কবরের জমি বুকিং চলছে…..

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   জমি বা ফ্ল্যাট নয়। বিক্রি হচ্ছে কবরের জায়গা। তাও আবার আবাসন মেলায়। ক্রেতার সারিও দীর্ঘ। বুকিং দিয়েছেন দুইশ’র বেশি মানুষ। কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন আরো অনেকে। কবরের জায়গা বিক্রি করতে রীতিমতো স্টল সাজিয়ে বসেছে একটি প্রতিষ্ঠান। রিহ্যাব মেলার ৩১ নম্বর স্টলে অন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মতোই ক্রেতাদের ভিড়।

২৪.৫ বর্গফুটের কবরের জায়গার মূল্য নেয়া হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বাড়ি তৈরির প্লট বা মাথা গোঁজার ঠাঁই ফ্ল্যাটের ব্যবসার ভিড়ে কেন মানুষের শেষ ঠিকানার জায়গা নিয়ে ব্যবসার চিন্তা- এমন প্রশ্নে ‘পূর্বাচল রাওজাতুল জান্নাত’ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এমআইএস হোল্ডিংস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, নিজের শেষ ঠিকানার চিন্তা থেকেই আমি এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে ৫ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৯। মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ৩১ নম্বর স্টলে কবরের জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে বুকিং নিচ্ছে এমআইএস হোল্ডিংস।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বাচল রাওজাতুল জান্নাত প্রকল্পের আওতায় বুকিং নেয়া হচ্ছে কবরের জমির। প্রায় ২০০ বিঘা জমির উপর ৮ হাজার কবরের সংকুলান হবে এখানে। ইতিমধ্যে দুই হাজার কবরের জমি তৈরি করা হয়েছে। ৭ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩.৫ ফুট প্রস্থের (২৪.৫ বর্গফুট) এসব জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর এককালীন সার্ভিস চার্জ ১৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে একটি কবর।

রিহ্যাবের জনসংযোগ কর্মকর্তা রশিদ বাবু বলেন, মেলায় কবরের জমি বুকিং নেয়া হচ্ছে। এমআইএস হোল্ডিংস কবরের জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে বুকিং নিচ্ছে বলে জানান তিনি। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ মেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব হোসেন বলেন, রিহ্যাব মেলায় এত বেশি সাড়া পেয়েছি যা কল্পনারও বাইরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে কবর দেয়ার উদ্যোগ এটাই প্রথম। তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ২শ’রও অধিক ব্যক্তি বুকিং দিয়েছেন। এ ছাড়া হাজার হাজার লোক আমাদের প্রকল্প সম্পর্কে জেনেছেন। এ সম্পর্কে এমআইএস হোল্ডিংস কোম্পানির কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, ঢাকা শহরে এখন আর কোথাও স্থায়ী কবর বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তবে আমরা এখানে স্থায়ী কবর দিচ্ছি। যিনি জমি কিনবেন তাকে সাব-কাবলা রেজিস্ট্রি করে দেয়া হবে। এই জমি আর কাউকে দেয়া হবে না। আমাদের এখানে শুধু কবরস্থান করা হবে, তা নয়। এখানে মসজিদ, মাদরাসা এবং এতিমখানাও করা হচ্ছে। যারা এখানে জমি কিনবেন তাদের টাকার একটি অংশ থেকে এগুলো করা হবে।

আফরোজা সুলতানা বলেন, কবর বুকিং দেয়া কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা আমাদের জানানো মাত্রই মরদেহ সম্পর্কিত সকল আনুষ্ঠানিকতা আমরাই করবো। মরদেহের গোসল করানো, জানাজা ও দোয়াসহ দাফনও আমাদের লোক দিয়েই করে দেবো। আর সবসময় ২৪ ঘণ্টা কবরের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করবো। এই সবকিছু ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মধ্যেই।

মেলায় বাড়তি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে স্টলটি। কবরের জমি কেনা যায় শুনে অনেকে অবাকও হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বিজ্ঞাপন দেখে বিস্তারিত জানতে এসেছেন এ স্টলে। তেমনি একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবদুর রশীদ বলেন, আমার এক আত্মীয় বলছিলেন যে, এখন কবরের জমি কেনা যায়। বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো। পত্র-পত্রিকায় খবর দেখি, অনেক কবরস্থানের পুরনো কবর উঠিয়ে নতুনদের দেয়া হয়। আজিমপুর কবরস্থান থেকে লাশের হাড়গোড় চুরি হয়। তাই ভাবলাম এখানে একটু দেখে যাই। এমনিতেও আমার মতো বুড়োদের অনেকেই আছেন যাদের দেখা-শোনার মানুষ কম। সন্তানেরা বিদেশে থাকে। তাই মৃত্যুর পর কবরটা যদি নিরাপদ থাকে সেই ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটাই ভেবে দেখছি।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।