রাত পোহালেই ভোট;ডাকসুতে কোন মডেল:নারী ভোটারে পাল্টে যেতে পারে হিসাব

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃগণমাধ্যমগুলোর জন্য বেশ কড়াকড়ি নিয়ম করাসহ নানান অভিযোগের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে সচল হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত ডাকসু। শুরু থেকেই নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগদান, প্রার্থী যাচাই-বাছাই এবং সর্বোপরি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের স্বাধিকারের এ প্রতিষ্ঠানটি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একযোগে অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু ও ১৮ হলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচন।

রোববার সকাল ৮টা থেকে শেষ হবে ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে বুথ নির্মাণের কাজ। আদা জল খেয়ে প্রার্থীরা চালাচ্ছেন শেষ দিকের প্রচারণা। গতকালও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং স্বতন্ত্র পরিষদের শিক্ষার্থীদেরকে দেখা গেছে প্রচারণায়। সব মিলিয়ে ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। ডাকসুর আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে সার্বক্ষণিক প্রচার মাধ্যম।

তবে এসব দিক ছাপিয়ে বর্তমান আলোচনায় রয়েছে ভোটের বিষয়টি। প্রার্থীরা যেমন ভোটার টানতে দিচ্ছেন নানা রকম প্রতিশ্রুতি। তেমনি ভোটার তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুঁজছেন তাদের পছন্দের এবং একই সাথে যোগ্য প্রার্থী। সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী কে? কোন প্রার্থীকে ভোট দেয়া দরকার? কেন তাকে ভোট দেয়া উচিত ইত্যাদি প্রশ্ন চাউর হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। পাশাপাশি কোন ধরনের ভোটাররা কী ধরনের ভূমিকা রাখবেন সে আলোচনায় মুখর গোটা ক্যাম্পাস। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বিশ^বিদ্যালয়ের নারী ভোটাররা। বিভিন্ন মহলের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের ডাকসু নির্বাচনের মূল ব্যবধান সৃষ্টি করবেন বিশাল সংখ্যক নারী ভোটার। তারা মনে করছেন নির্বাচনের যেকোনো হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারেন তারা। নারী ভোটাররা যে দিকে যাবে সে দিকেই হয়তো ঝুঁকবে জয়ের পাল্লা। বিপরীত দিকে আসবে হার।

বিশ^বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ছেলেদের ১৩ ও মেয়েদের ৫ হলে মোট ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৯৪৪ যা মোট ভোটারের ৬২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী ১৬ হাজার ৩১২ জন; যা মোট ভোটারের ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি (৪ হাজার ৬০৮ জন) ভোটার রয়েছে রোকেয়া হলে এবং সবচেয়ে কম (১ হাজার ৩৪৬ জন) ভোটার রয়েছে অমর একুশে হলে। এর মধ্যে ছেলেদের বিজয় একাত্তর হলে ৩ হাজার ১৫৫, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২ হাজার ৫২, ফজলুল হক মুসলিম হলে ২ হাজার ১৭৫, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৯৮১, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ৪৯৬, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলে ১ হাজার ৭৯৯, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১ হাজার ৬৫৮, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২ হাজার ৫৭, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১ হাজার ৮১৪, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২ হাজার ৩০১, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৮৪০, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২ হাজার ১৭০ জন। এ ছাড়া মেয়েদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২ হাজার ২৮৮, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ১ হাজার ৯২৮, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩ হাজার ৭২৪, শামসুন্নাহার হলে ৩ হাজার ৭৬৪ জন ভোটার রয়েছেন।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ছেলেদের হলগুলোর গণরুমের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পেতে পারে ছাত্রলীগ। তবে মেয়েদের হলগুলোতে ছাত্রলীগের একপেশে প্রভাব না থাকায় যেকোনো দিকে যেতে পারে তাদের সমর্থন।

যারা প্রতিশ্রুতিশীল তাদের থেকেই তারা নির্বাচন করবেন আগামীর নেতৃত্ব। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাত কলেজ বাতিলের আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের প্রকাশ্য বিরোধিতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদেরও ওপর আক্রমণ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেয়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের তাণ্ডব ইত্যাদি কারণে মেয়েদের হলগুলোতে আধিপত্য হারাবে ছাত্রলীগ। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিয়ে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের প্যানেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দিকে ঝুঁকতে পারে নারী ভোটাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের তৃতীয় বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী  বলেন, ছেলেদের হলগুলোর মতো মেয়েদের হলে ছাত্রলীগ তথা কোনো বিশেষ ছাত্রসংগঠনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে নেতিবাচক ইমেজ রয়েছে সরকার সমর্থক এ ছাত্রসংগঠনের। তাই মেয়েদের হলগুলোতে জয়-পরাজয়ের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। রোকেয়া হলের মাস্টার্সের এক ছাত্রী বলেন, কোনো প্রার্থী প্রতিশ্রতিশীল, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কারা সচেতন, মেধাবী, সৎ ও সাহসী ইত্যাদি গুণসম্পন্ন প্রার্থীদেরকে পছন্দের তালিকায় রাখব আমরা। সে ক্ষেত্রে দল বা সংগঠন মুখ্য নয়।

এবারের ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের শুরুতে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রে থাকলেও প্রচার-প্রচারণায় তুলনামূলক অনেকটা পিছিয়ে বিএনপির সংযোগী সংগঠন ছাত্রদল। আন্তঃকোন্দলে সংগঠনটির বেহাল দশা বলে ছাত্রদলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কেবল সঠিক এবং পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে অনেক হলের ভিপি-জিএস প্রার্থীকেই চিনছে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আবার যতটুকুও প্রচারণা ছিল তার বেশ কয়েক জায়গায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগ। এসব কারণেও পিছিয়ে থাকতে পারে ছাত্রদল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বন্দ্বে প্রচার-প্রচারণায় ভাটা পড়ছে। যতক্ষণ ভাই (নেতা) আছে ততক্ষণ প্রচারণায় সক্রিয় থাকছে তারা।

রাত পোহালেই ভোট ডাকসুতে কোন মডেলপাতা

রাত পোহালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ। স্বাধীনতার পর ডাকসু’র এটি অষ্টম নির্বাচন। ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা শেষ সময়ের প্রচারণা সেরেছেন। বহুল প্রত্যাশিত এ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ   করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। হলগুলোতে সাজ সাজ রব। ব্যানার- পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস।

উৎসবের আমেজ।

অন্যদিকে হল প্রশাসনও ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট কাজে। হলগুলোতে চলছে বুথ তৈরির কাজ। গতকাল কয়েকটি হলে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত স্থানে তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচনী বুথ। তবে এতো উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে কি না? ভোট দিতে পারবতো? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকায় অভ্যন্তরীণ কারচুপির গন্ধ পাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। যদিও প্রতিটি হলের আবাসিক শিক্ষকরা পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়াও গণমাধ্যমের ওপর অতিরঞ্জিত কড়াকড়িও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে- ডাকসুতেও কি হুদা কমিশনের মডেল হতে যাচ্ছে কি না? নাকি অন্য কোন নতুন মডেল? জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক গতরাতে মানবজমিনকে বলেন, ‘নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট না রাখা নিঃসন্দেহে একটি কারচুপির লক্ষণ। যদি তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূরণ করে কেন্দ্রে নিয়ে যায় তাহলে সেটি কে দেখবে।

আবার নির্বাচনে সরাসরি সম্প্রচারসহ গণমাধ্যমের উপরও ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শঙ্কিত করছে। আমরা বলে দিতে চাই যদি কোনো ধরনের কারচুপির চেষ্টা করা হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোরভাবে অতীতের মতো প্রতিহত করবে। সে সময় কিছু ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে অবাধ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর তারা। জানা গেছে, ডাকসু ও হল সংসদে মোট ভোটার ৪২ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি ও হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সংসদে ২২৯ জন এবং হল সংসদে ৫০৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়াও নির্বাচনে ছাত্রদল, বামজোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড দেখিয়ে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও আইডি কার্ড নবায়ন না করে কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না বলে শিক্ষার্থীদের আগে জানানো হয়েছিল। যদিও এমন সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসেছে প্রশাসন।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই ভোট দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তবে এক্ষেত্রে তাকে হলের শিক্ষার্থী হিসেবে একটি ডকুমেন্ট দেখাতে হবে।’ প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ভোটারদের আবসিক হলের আইডি কার্ড নবায়ন করা কোনো বিষয় না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারাই ভোট দিতে পারবে। তবে সে যে ওই হলের ছাত্র তার একটা প্রমাণ সঙ্গে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে পে-ইন স্লিপ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখাই উচিত।’ এদিকে ১৮টি হলে ৪২ হাজার ৯২৩ শিক্ষার্থীর ভোটগ্রহণের জন্য ৫১১টি বুথ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, ড. মু. শহীদুল্লাহ হলে ২০টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫টি, অমর একুশে হলে ২০টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি, পল্লী কবি জসীমউদ্‌্‌দীন হলে ২০টি, মাস্টার’দা সূর্যসেন হলে ৩৫টি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৩০টি, রোকেয়া হলে ৫০টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫টি, শামসুন্নাহার হলে ৩৫টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২০টি, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ১৯টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২টি, স্যার এএফ রহমান হলে ১৬টি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৪টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ২০টি ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ তৈরি করতে কাজ করছে প্রশাসন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাস ও হলে হলে প্রার্থীরা গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণাও জমেছে বেশ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এবং আবাসিক হলগুলোতে চলেছে বিরামহীন প্রচারণা।

থাকছে না পোলিং এজেন্ট: নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ এর (খ) ধারায় আছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন। তবে নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট থাকছেন না বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষকরা পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে জহুরুল হক হলের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ভোটকেন্দ্রের বুথে পোলিং এজেন্ট রাখার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষকরা পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা: এদিকে গতকাল দুপুরে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদ’। পরিষদ মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এএমআর আসিফুর রহমান লিখিত বক্তব্যে ইশতেহার তুলে ধরেন। ইশতেহারে হল ব্যবস্থাপনা, গণরুম, গেস্টরুম, শিক্ষক নিয়োগ, সিট সংকট, খাবার ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, প্রকাশনা, খেলাধুলা, ছাত্র সংগঠন, পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। ১৬ দফা ইশতেহারে রয়েছে- সমাধান-চিন্তা, কথা বলা ও কাজের স্বাধীনতা; সকল ক্যান্টিনে খাবারের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ, বাধ্যতামূলক ত্রৈমাসিক নিরীক্ষণ; অনলাইনে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সকল কার্যক্রম; স্থায়ী নিয়োগের আগে শিক্ষার্থীদের দ্বারা দুই বছর মূল্যায়ন; উন্নত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; মেয়েদের হলে সার্বক্ষণিক ডাক্তার নিশ্চিতকরণ ও ডিসপেন্সারি স্থাপন; সবগুলো ছাত্রী হল রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা রাখা; প্রকাশনা সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং; তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি; শিক্ষার্থী অনুপাতে হল নির্মাণ; বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য হলের মাঠ ভাড়া বন্ধ; পুলিশ ফাঁড়ি উচ্ছেদ করে অ্যাকাডেমিক ভবন/হল নির্মাণ; শিক্ষার্থী অনুপাতে হল নির্মাণ; উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মানোন্নয়ন; বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ সরকার নয়, স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধার; আন্দোলনে ব্যানারবাজি নয়, সুস্থ ধারার রাজনীতির বিকাশ, ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই চটকদার বিভিন্ন ইশতেহার দিচ্ছে উল্লেখ করেন আসিফ বলেন, অন্যদের ইশতেহার দেখে মনে হচ্ছে, ১১ই মার্চ নির্বাচন হলে ১২ই মার্চই ২৮ বছর ধরে চলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টি তা নয়। লেখালেখিতে জড়িত থাকার ফলে আমার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও সমস্যার গোড়ায় পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। তাই এসব সমস্যার মূলোৎপাটনে কাজ করব, কথা দিচ্ছি শিক্ষার্থীদের।

ধাওয়া খেয়ে পালালো ছাত্র সমাজ: এদিকে ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ধাওয়া খেয়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসের শ্যাডো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছাত্র সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক নিষিদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে ২০-২৫ জন নিয়ে শ্যাডো থেকে মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল জাতীয় ছাত্র সমাজ। এ সময় তারা এরশাদের নামে স্লোগান দেয়। এ সময় মধুর ক্যান্টিনে থাকা ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরা দৌঁড়ে পালায়। পরে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শাজাহান আলী সাজু, ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বক্তব্য রাখেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র সমাজের থেকে জিএস প্রার্থী মামুন ফকির বলেন, আমার প্রশ্ন তারা কেন হামলা করবে। আমরা কি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী না। আমরা ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ সবার সঙ্গে কথা বলেই নির্বাচন করছি। তারা বলছেন কোনো সমস্যা নেই। অথচ বামরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি মনে করি এরা বাম নামে দেশের কলঙ্ক। তারা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। তিনি বলেন, ৯০ সালে আমাদের ওপর একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল ঠিক। কিন্তু আমার প্রশ্ন আমরা কেন আমাদের পূর্ব-পুরুষদের দায় নেবো। আমরাতো নতুন প্রজন্মই। এ বিষয়টি এখন বিবেচনা করার সময় হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যা বললেন ডিবির হারুন

ভুয়া সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।