বৃদ্ধা মায়ের ২২ বিঘা জমি হাতিয়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিল ৩ ছেলে

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ     ১০ মাস ১০ দিনে গর্ভে থাকার জন্য মায়ের প্রয়োজন পড়লো। খাবার তুলে খেতে, প্রথম কথা শিখতে, হাত ধরে হাঁটতে, অসুখ-অসুস্থ্যতায় সুস্থ্য থাকতেও মায়ের প্রয়োজন পড়লো। যে মা সারাজীবন নিজের দিকে না তাকিয়ে কেবল সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে শত কষ্ট সহ্য করে তাদেরকে আগলে রেখে বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলেন, ঠিক তখনই নিজের ছেলেদের নিকট সেই মায়ের প্রয়োজন ফুরালো। বৃদ্ধ বয়সে যখন নিজের পরিবার আর ছেলেদের আশ্রয় ও সান্নিধ্যই সবচেয়ে বেশি জরুরী ছিল, তখন তার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল তারই গর্ভে ধারণ করা সন্তানরা। মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায়।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামে তিন পাষণ্ড ভাই মিলে বৃদ্ধা মায়ের ২২ বিঘা জমি নিজেদের নামে দলিল করার পর মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আর বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার আগে বৃদ্ধা মায়ের উপর ওই তিন পাষণ্ড ছেলে চালায় শারীরিক-মানসিক নানা জুলুম-নির্যাতন।

রোববার সকালে উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সাদা রঙের শাড়ির উপর লাল রঙের কাপড় পড়ে এক বৃদ্ধা মাকে বসে থাকতে দেখা যায়। বয়স কম হলেও ৮০ বছর তো হবেই। মুখে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছেন (বিলাপ করছেন) এক নাগাড়ে। আর ঠিক ওই সময় এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ওই বৃদ্ধা মায়ের।

এখানে বিড়বিড় করে কি বলছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বৃদ্ধা বলেন, তার নাম আজেদা খাতুন। স্বামী মৃত বজিরউদ্দীন ওরফে মুখধুরঝাটা। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামে। মোজাম্মেল, মফিজুল ও হাফিজুল নামে তার তিন ছেলে রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, গত কয়েক মাস আগে আমার তিন ছেলে মোজ্জামেল, মফিজুল, হাফিজুল মিলে আমার কাছ থেকে ২২ বিঘা জমি তারা দলিল করে নেয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। এখানে কেন এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে এসেছি, যদি চেয়ারম্যান কিছু টাকা দেয় তাহলে খাবার কিনে খাব।

এ অভিযোগের বিষয়ে বৃদ্ধা আজেদা খাতুনের বড় ছেলে মোজ্জামেলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমিতো একাই তার (আমার মায়ের) দুধ খাইনি। তার আরো দুই ছেলে রয়েছে, তাদেরকে ফোন দেন।
তিনি আরো বলেন, আমি কাজে ব্যস্ত রয়েছি। আপনার দয়া হলে ভ্যানে করে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এই কথা বলেই ফোনের লাইন কেট দেন বড়ছেলে মোজাম্মেল।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে উপস্থিত হয়ে ভাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমি যতোদূর পারি বৃদ্ধা আজেদা খাতুনকে সহযোগিতা করবো।

এদিকে মাগুড়া গ্রামের স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বৃদ্ধা আজেদা খাতুনের স্বামী মৃত বজিরউদ্দীন ওরফে মুখধুরঝাটা এর প্রায় ১৫০ বিঘা জমি রয়েছে। আর সেটা তার তিন ছেলে মিলে ভাগ করে চাষ করে।

তারা আরো বলেন, ওই এলাকার সব চেয়ে ধনী ব্যক্তি মৃত বজিরউদ্দীন ওরফে মুখধুরঝাটা। এত জায়গাজমি থাকার পরেও যদি তার তিন ছেলে তাদের বৃদ্ধা মাকে আশ্রয় না দেয়, তাহলে আমাদের কি করার আছে

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।