হামলার পর কোন অবস্থায় শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা?

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:  শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে রোববারের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সাথে ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর নাম আসার পর শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। অনেকেই তাদের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

গত পাঁচ বছর ধরে ব্যবসার সূত্রে কলম্বোতে থাকেন বাংলাদেশের নাগরিক খালেকুজ্জামান সোহেল। সোমবার দুপুরে শহরের ওয়াল্লাওয়া এলাকায় এক মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে তিনি দেখতে পান যে, ২০-২৫ জন সশস্ত্র পুলিশ মসজিদটি পাহারা দিচ্ছে।

তিনি বলেন,‘ভেতরে মুসল্লিদের সাথে কথা বলে মনে হলো তারা যতটা না আতঙ্কগ্রস্ত তার চেয়ে বেশি লজ্জিত এবং দুঃখিত। তারা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে তাদের সম্প্রদায়ের কেউ দেশের ভেতরে এই ধরণের হামলা করতে পারে।’

কলম্বোতে মুসলিম সংগঠন ন্যাশনাল শুরা কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা আজমান আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আতঙ্কের চেয়ে মুসলিমরা ‘ক্ষুব্ধ, ব্যথিত’।

তিনি আরো বলেন,‘আতঙ্ক যে একবারেই নেই তা বলবো না, নানা ধরণের গুজব শোনা যাচ্ছে, তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের খ্রিস্টান ভাইয়েরা বুঝতে পারছেন যে শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা কোনোভাবেই তাদের ক্ষতি চায় না।’

আব্দুল্লাহ জানান, শীর্ষস্থানীয় মুসলিম নেতারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি জানান, হামলার তীব্র নিন্দা করে মসজিদে মসজিদে ব্যানার ঝোলানো হয়েছে।

‘আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে সব সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। কোনো সমস্যা নেই। তবে শুধু মুসলমান হিসাবে নয়, এদেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমি উদ্বিগ্ন। এদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।’

শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস এমনিতেই খুব ভালো না। গত বছর ক্যান্ডি এবং আশপাশের বেশ কিছু শহরে মসজিদ এবং মুসলিম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কট্টর বৌদ্ধদের হামলার পর সাময়িক জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।

ফলে রোববারের হামলার সাথে মুসলিম একটি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা প্রকাশ হওয়ার পর স্বভাবতই অনেক মুসলিম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই উদ্বেগ প্রকাশিত হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গলের সাংবাদিক ফারহান নিজামউদ্দিন বলেন, মুসলিমরা ক্ষুব্ধ এবং তারা হামলাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি করছেন।

‘সোশ্যাল মিডিয়াতে শত শত মুসলিম লিখছেন এই সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই।’

সোশ্যাল মিডিয়াতে গলের একজন মুসলিম লিখেছেন,‘আমার জন্ম মুসলিম পরিবারে, কিন্তু আমি পড়াশোনা করেছি খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে। ফলে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তি আমার হৃদয়ের খুব কাছের।’

আরেকজন লিখেছেন,‘শ্রীলঙ্কায় দুটো গোষ্ঠী – একটি শ্রীলঙ্কান এবং আরেকটি সন্ত্রাসী।’

ব্রিটেনে প্রবাসী শ্রীলঙ্কান মুসলিমদের শীর্ষ সংগঠন শ্রীলঙ্কান ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ব্রিটেনে শ্রীলঙ্কান মুসলিমদের সব সংগঠন রোববারের সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে সোমবার একটি জরুরী বৈঠকে বসছে।

সংস্থার সচিব মঞ্জুলা ওসমান বলেছেন, কীভাবে এই সন্ত্রাসী হামলা সামাল দিতে প্রবাসী শ্রীলঙ্কান মুসলিমরা সাহায্য করতে পারে সেটাই এখন তাদের প্রধান চিন্তা।

‘এটা সত্যি যে শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে বহুদিন ধরেই উদ্বেগ রয়েছে। তবে রোববারের হামলার সাথে ইসলামি একটি সংগঠনের যোগসাজশ নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বড় কোনো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে আমরা এখনও শুনিনি… আমরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি আপ্রোচ’ নিচ্ছি।’

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য মুসলিম আশ্বস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো বলেছেন,‘হামলাকারীরা দেশের সিংহভাগ মুসলিমের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমি তাদের মুসলিমই বলবো না। এ দেশের সাধারণ মুসলিমরা অত্যন্ত সজ্জন এবং অন্য সব সম্প্রদায়ের সাথে তারা সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করেন।’

শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মুসলিম। সূত্র বিবিসি বাংলা।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।