বোনের দাবি: শ্রীলঙ্কা হামলার মূলহোতা জাহরানের ১৮ নিকটআত্মীয় নিহত

ক্রাইমর্বাতা রির্পোট:   শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার পর এর মূলহোতা জাহরান হাশিমের ১৮জন আত্মীয় নিহত হয়েছেন। এমন দাবি করেছেন জাহরানের বোন মোহাম্মদ হাশিম মাথানিয়া। তিনি সিএনএনের কাছে বলেছেন, ওই হামলার পর তার পরিবারের ১৮ জন সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। তার আশঙ্কা হামলা পরবর্তী ঘেরাও অভিযানে এসব আত্মীয়-স্বজন নিহত হয়েছেন।

২১ এপ্রিল তিনটি গির্জা ও তিনটি অভিজাত হোটেলে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে আড়াইশ মানুষ নিহত হন। প্রথমে নিহত ৩৫৯ বলা হলেও পরে এ সংখ্যা কমিয়ে ২৫৩ বলা হয়। হামলায় আহত হন কমপক্ষে ৫০০ মানুষ।

এর পরই সরকার সারাদেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আরো হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে শ্রীলঙ্কা।

হামলার মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মোহাম্মদ জাহরান হাশিমকে। পাঁচ তারকা সাংগ্রি-লা হোটেলে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে সে নিহত হয়েছে। এতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার দেহের বিভিন্ন অংশ। সেগুলোর ছবি স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়। জাহরান হাশিমের বোন মোহাম্মদ হাশিম মাথানিয়া শনিবার কথা বলেন সিএনএনের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, পুলিশ স্টেশনে তাকে ওইসব ছিন্নভিন্ন অঙ্গগুলোর যে ছবি দেখানো হয়েছে তা তিনি তার ভাইয়ের (জাহরান) বলে সনাক্ত করতে পেরেছেন। তিনি আরো বলেন, ওই হামলার পর আমার পরিবারের ৫ জন সদস্য নিখোঁজ। তারা হলেন আমার তিন ভাই, পিতা ও আমার এক দুলাভাই।

ওদিকে শুক্রবার রাতে শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলে সেইন্টামারুথু শহরে জঙ্গি ও পুলিশের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। সেখানে ৬টি শিশু সহ নিহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। শনিবার দিনের বেলা সূর্য্যরে আলো ফোটার পর ভয়াবহ ঘটনার প্রকাশ পেতে থাকে। ঘেরাও দেয়া ওই বাড়িতে পুড়ে কয়লা হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃতদেহগুলো। তিনটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল সেখানে। এতে ওই বাসার ছাদ উড়ে যায়। এখানে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজনকে মোহাম্মদ নিয়াজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সে বর্তমানে নিষিদ্ধ ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের প্রথম সারির সদস্য। একই সঙ্গে সে মাথানিয়ার দেবর বা ভাসুর।

এ সম্পর্কে মাথানিয়া সিএনএনের কাছে বলেছেন, যদি ওই নারী ও পুরুষদের মৃতদেহগুলো না দেখতাম তাহলে আমার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হতো না। যখন আমাকে বলা হলো ৬টি শিশু নিহত হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো আমার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কেউ হবে। ওই বাড়িতে থাকতেন ৫ জন নারী। তারা হলেন আমার তিন ভাইয়ের বউ, আমার ছোটবোন ও মা। সব মিলিয়ে সেখানে ছিল সাতটি শিশু।

মাথানিয়া আরো বলেছেন, তার ভাই জাহরান হাশিমের স্ত্রী ও মেয়ে আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তারা বলেছে, শুক্রবার একটি বাড়ি ঘেরাও দেয়ার সময় আহত একজন নারী ও একটি শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবারের অভিযানের সময় যখন বন্দুকযুদ্ধ হয় তখন আহত এক সন্দেহভাজন মোটরসাইকেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আরো একজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী পালিয়ে গেছে বলে আশঙ্কা শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর। কর্তৃপক্ষ শুক্রবার প্রথমদিকে বোমা তৈরির জন্য বিয়ারিংয়ের এক লাখ বল, আইসিসের পোশাক ও পতাকা উদ্ধার করেছে একটি গ্যারেজ থেকে। আইএস শ্রীলঙ্কা হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে এখনও হামলাকারী ও জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের মধ্যে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি প্রমাণিত নয়। সরকার মনে করছে, হামলা চালিয়েছে ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত। তবে এই গ্রুপটি হামলার দায় স্বীকার করে নি।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।