ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হতে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন সেই দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:  নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আলোচিত ডিআইজি মিজানের এক বিস্ফোরক তথ্যে ফেঁসে গেছেন দুদকের উপপরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। কয়েকটি অডিও ক্লিপের প্রমাণসহ ডিআইজি মিজানের দাবি, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বাছির।

এবার অভিযোগ এলো খন্দকার এনামুল বাছিরের স্ত্রী রুমানা শাহীন শেফার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ভিকারুননিসার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হতে চেয়েছিলেন রুমানা শাহীন।

সূত্র জানায়, মোট চারজনকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষও দিয়েছিলেন তিনি।

রুমানা শাহীন শেফা বর্তমানে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

জানা যায়, রুমানা শাহীনকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য ভিকারুননিসার গভর্নিং বডি একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে। গত ২৭ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষায় মোট ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে রুমানা শাহীনও পরীক্ষা দেন। সে পরীক্ষায় মাত্র সাড়ে ৩ নম্বর পান তিনি।

তবুও মৌখিক পরীক্ষায় ও অ্যাকাডেমিক পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় প্রথম করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় মাত্র তিন নম্বর পেয়ে ফেল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় ও অ্যাকাডেমিক পারফরমেন্স মিলিয়ে রুমানা শাহীন শেফাকে ১৯ নম্বর দেওয়া হয়। সেই পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম পান ১৭ নম্বর।

এ ঘটনায় বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা সব অনিয়ম দূর করা সহ ও অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক শাহেদুলের শাস্তি দাবি করেন।

এজন্য অভিভাবকরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে গত ২ মে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন।

অভিভাবকদের পক্ষে সেই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভিকারুননিসায় যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য আর্থিকভাবে লাভবানের উদ্দেশে তাদের পছন্দের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের চেষ্টা করেন।

বিষয়টি অভিভাবকরা জানতে পেরে গত ২৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু মহাপরিচালক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ২৬ এপ্রিল পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান।

খোরশেদ আলমের অভিযোগ, নিয়োগ কমিটি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য উত্তরপত্রে ৩০ নম্বরের ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য এবং ৩টি বাংলা ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হওয়ার পরই পরীক্ষায় ফেল করেন রুমানা শাহীন শেফা।

লিখিত পরীক্ষায় এমন ফলাফলে তার যোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে।

এরপর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির (জিবি) সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিভাবকদের থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নির্দেশ দেয়া হয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লেখা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।