হামলা চালিয়ে জমি দখল দাঁড়িয়ে দেখল পুলিশ হামলার ভিডিও মুছে দেন এসআই

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট : কুড়িগ্রামের উলিপুরে সালিশ বৈঠক চলাকালে পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধপূর্ণ জমি হামলা চালিয়ে দখলে নেয়া হয়েছে। টিনের তিনটি ঘর ও সীমানা বেড়া ভেঙে এবং এসব ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র লুট করে ২৫ শতাংশ জমি দখলে নেয়া হয়।

পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে সব দেখলেও হামলা ঠেকানোর কোনো চেষ্টাই করেনি। বরং মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে হামলার ভিডিও মুছে ফেলেন এক এসআই। ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ মধুপুর সাতকুড়ারপাড় গ্রামে শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের সুবল চন্দ্র বর্মণের দখলে থাকা ওই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে প্রতিবেশী সুশীল চন্দ্র বর্মণের। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকে একাধিকবার মীমাংসা করা হয়, তবে সুশীলরা তা মানেনি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, কুড়িগ্রাম জজকোর্টে উলিপুর সাব-জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ওই জমিটিই এসআই তপন কুমার ও অন্য পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে শনিবার দখলে নেয় সুশীল গং।

সুবলের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৪ এপ্রিল উলিপুর বাজারে যাওয়ার পথে অটোরিকশা থামিয়ে সুবলের ভাই রণজিতকে বেদম মারধর করে সুশীলরা। স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় উলিপুর থানায় মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই হাসান। এরপর প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় উল্টো সুবল পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে সুশীলরা। এসআই তপন কুমারকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য থানা থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই এসআই ঘটনা আপস-মীমাংসার জন্য দুইপক্ষকে ১৩ জুন থানায় ডাকেন। সেখানে সুশীলের পক্ষে রায় দিয়ে তা মেনে নেয়ার জন্য এসআই তপন সুবল পরিবারের সদস্যদের চাপ দেন। নানা ভয়ভীতি দেখান।

স্থানীয়রা জানান, পরে বিষয়টি থানার বাইরে মীমাংসা করার জন্য উভয়পক্ষ সম্মত হয়। সমাজসেবক পার্থ সারথী সরকার এর দায়িত্ব নেন। কথা ছিল শনিবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ওই জমি পরিদর্শন করে বাজারে সালিশ বৈঠকে বসবেন পার্থ। কিন্তু পরিদর্শনের পর ওই জমিতেই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে হঠাৎ উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষ মারমুখী হয়ে উঠে। খবর দেয়া হয় থানায়। এসআই তপন ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।

স্থানীয় রঞ্জু মিয়া, আলতাফ হোসেন, গাজীবরসহ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তপন দারোগা আসামাত্রই সুশীল পরিবারের সদস্যরা লাঠিসোটা নিয়ে সুবল পরিবারের সদস্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ সে সময় নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় সুবলের বড় ভাই রণজিতের স্ত্রী নমিতা রানী প্রতিপক্ষের হামলার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিলেন। এসআই তপন কুমারের নির্দেশে সেকেন্দার নামে হামলাকারীদের একজন মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে তার (তপন) হাতে দেন। এসআই ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলে ফোনটি ফেরত দেন। পরে অবস্থার আরও অবনতি হয়। এ সময় অতিরিক্ত ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ২০ বান্ডিল টিনসহ তিনটি ঘর, বেড়া ও আসবাবপত্র লুট করে ওই জমির দখল নেয় সুশীলরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেন, পুলিশ বরং হামলাকারীদের সহায়তা করেছে। সুবলদের মামলায় ফাঁসানোর জন্য সুশীল পক্ষের পঙ্কজ কান্তি বর্মণ (৩০) ও প্রদীপ কুমারকে (১৯) উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। জানতে চাইলে পার্থ সারথী সরকার বলেন, সালিশ বৈঠক চলাকালে উভয়পক্ষ উত্তেজিত হলে কার্যক্রম বন্ধ করে চলে আসি। উলিপুর থানার ওসিকে বিষয়টি জানাই। এসআই তপনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। পরে বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় এসআই তপন কুমারের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে জানান, ঘটনা যা ঘটেছে তার জন্য আমি একা দায়ী নই। এসআই হাসান ও এসআই রাসেলও ঘটনাস্থলে ছিলেন। মোবাইলের ছবি ও ভিডিও কেন ডিলিট করেছেন জানতে চাইলে বলেন- ‘আসেন সামনা সামনি কথা বলব।’ এরপর ফোন কেটে দেন তিনি। পরে আর ফোন দিলেও ধরেননি।

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ২৫ শতক জমি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। মীমাংসার চেষ্টা চলছে কিন্তু আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। আবারও চেষ্টা করব। তবে আজকের (শনিবার) ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একপক্ষকে পুলিশের সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি।

Check Also

আশাশুনিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

এস, এম মোস্তাফিজুর রহমান ॥ আশাশুনিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।