মাকে বাঁচাতে বিয়ে ভেঙে দিলেন বাংলাদেশী যুবতী, দান করলেন কিডনি

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:  মাকে কিডনি দিতে হবে। দাতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় এগিয়ে এলেন তারই মেয়ে। কিন্তু তাতে বাধা দিলেন তার হবু স্বামী। তিনি কোনোমতেই হবু স্ত্রীকে কিডনি দান করতে দেবেন না। তার কথা রাখতে পারলেন না বাংলাদেশী ২৫ বছর বয়সী ওই যুবতী। তিনি বিয়ে ভেঙে দিলেন। দাঁড়ালেন মায়ের পাশে।

মাকে দিলেন নিজের কিডনি। বিরল এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালোরে পুরনো বিমানবন্দর সড়কে মনিপাল হাসপাতালে। এখন মা ও  মেয়ে দু’জনেই সুস্থ আছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।

ওই যুবতী বা তার মার নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয় নি। বলা হয়েছে, প্রেমিকের সঙ্গে এনগেজমেন্টও হয়ে গিয়েছিল ওই যুবতীর। কিন্তু মাকে কিডনি দেয়ায় বাধা দিয়েছেন তার হবু স্বামী। এতে তিনি সেই এনগেজমেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। শহরের চিকিৎসকরা বলছেন, অবিবাহিতা যুবতীদের অন্য নারীকে কিডনি বা কোনো অঙ্গ দান করার ঘটনা সাধারণ কোনো বিষয় নয়। এটা একটি বিরল ব্যাপার। চিকিৎসকরা বলছেন, তারা বাংলাদেশী ওই যুবতীর কিডনি নেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। কারণ, এতে তার ভবিষ্যত জীবনে নানা অসুবিধা দেখা দিতে পারে। ওই মা ও মেয়ের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে গত ২১শে জুলাই। এরপরই ওই যুবতী তার বিয়ের এনগেজমেন্ট বাতিল করেছেন। মনিপাল হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ও প্রতিস্থাপন বিষয়ক সার্জনরা এ কথা পরে জানতে পারেন। কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সঙ্করান সুন্দর বলেন, আমরা সাধারণত অবিবাহিত যুবতীর দেহ থেকে অঙ্গ বা কিডনি নিতে দ্বিধা করি। কারণ, এতে তার বৈবাহিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।  এটা শুনতে খারাপ লাগে। কিন্তু আমি সব সময়ই চিন্তা করি, যদি মেয়েটি আমার নিজের মেয়ে হতেন, তাহলে আমি কি করতাম। ওই যুবতী ছিলেন দৃঢ়চেতা। তাই কিডনি দাতা হিসেবে তাকে মেনে নিতে হয়েছে অনিচ্ছা সত্ত্বেও। সব কিছু ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হয়েছে। তারা দু’জনেই এখন ভাল আছেন।

ডা. সুন্দর বলেন, ওই যুবতীর পিতার সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছে। তাকে আমি বলেছি, এমন একটি চমৎকার মেয়ে থাকায় তিনি সৌভাগ্যবান। জবাবে ওই পিতা আমাকে বলেছেন- ইয়েস স্যার। আমি সৌভাগ্যবান। বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলেন। বলেন, মাকে কিডনি দিতে গিয়ে নিজের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে তার এই বড় মেয়ে।

ওই পিতা ডা. সুন্দরকে বলেছেন, তার দুটি মেয়ে থাকার কারণে অন্যরা তাদেরকে নিয়ে নানা রকম ব্যঙ্গ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সেই মেয়েই আমাদের পরিবারকে রক্ষা করেছে। এক দশক আগে এমনই একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওই পিতা। তখন একজন নারী তার পিতাকে কিডনি দান করেছিলেন। ওই নারী তখন ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এতে তার জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু পিতাকে কিডনি দেয়ার জন্য ওই নারী গর্ভপাত করাতে চান। কিন্তু তাতে রাজি হন নি ডা. সুন্দর। তিনি ওই নারীকে বোঝাতে থাকেন। এ সময় চিকিৎসকদের মধ্যে প্রশ্ন এসে যায়, কোন বিষয়টিকে তারা প্রাধান্য দেবেন।

সর্বশেষ বাংলাদেশী ওই যুবতীর বিষয়ে অঙ্গ গ্রহণকারী ও চিকিৎসকদের মধ্যে সোমবার শেষ রাত পর্যন্ত বিতর্ক হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে ওই নারীর কিডনি নেয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অনিচ্ছার পক্ষে সমর্থন দেন অনেকে। মনিপাল হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ও চেয়ারম্যান ডা. এইচ সুদর্শন বল্লাল বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপরীতমুখী না হলেও অবিবাহিত নারীর অঙ্গ দান করা নিয়ে সমাজে রয়েছে গুরুত্বর উদ্বেগ। এমন নারী কিডনি দান করলে তার সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে আতঙ্ক মনে করেন বিবাহিত নারী, তার স্বামী অথবা শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে, আমরা বাংলাদেশী ওই যুবতীর সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করি।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।