১৬ বছরে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   ১৬ বছর পর পুনরায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া কারাবন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির বিচারক। এর আগে সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০০৩ সালে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

খবরে বলা হয়, এক বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা নিশ্চিত করেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। জানান, পাঁচ বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় নির্ধারণ করতে ব্যুরো অব প্রিজন (বিওপি) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বার জানান, ওই পাঁচ বন্দি হত্যা ও শিশু ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত। ডিসেম্বর ২০১৮ ও জানুয়ারি ২০২০ মাসে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। তিনি আরো বলেন, উভয় পক্ষের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে বিচার বিভাগ সবচেয়ে খারাপ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে।

বিচার বিভাগ আইনের শাসন সমর্থন করে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে ট্রেসি জয় ম্যাকব্রাইড নামের ১৯ বছর বয়সী এক সৈনিককে অপহরণ ও হত্যার দায়ে উপসাগরীয় যুদ্ধে অংশ নেয়া ৫৩ বছর বয়সী সৈনিক লুই জোনস জুনিয়রের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর অনানুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করা হয়। যদিও রাজ্য পর্যায়ে তা বহাল ছিল। বৃহস্পতিবারের ঘোষণায় তার অবসান ঘটে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মৃত্যুদণ্ড বিষয়ক অলাভজনক সংগঠন ‘ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টার’ এর নির্বাহী পরিচালক জানান, এই ঘোষণা অপ্রত্যাশিত নয়। তিনি বলেন,  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মৃত্যুদণ্ড প্রদানের কট্টর সমর্থক। এর আগে বেশ কয়েকবার এই শাস্তি কার্যকরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তাই নতুন এই ঘোষণা অপ্রত্যাশিত ছিল না।

এদিকে, আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন (এসিএলইউ) বলছে, বিষয়টির প্রতিটি পর্যায়ে ন্যায্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। এসিএলইউয়ের কেসি স্টুবস বলেন, এই মামলাগুলোর বিবেচনা এবং পর্যালোচনা করার জন্য সময় প্রয়োজন। এভাবে একসঙ্গে কার্যকর করার কোনো ভিত্তি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড
১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে অপর এক রায়ে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল করে সুপ্রিম কোর্ট। আরো পরে ১৯৮৮ সালে এক বিল পাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনে তৎকালীন মার্কিন সরকার। সাধারণত, অপরাধীদের শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক প্রবেশ করিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় দেশটিতে।

ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত  কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ৭৮ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে মাত্র তিনটি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া কারাবন্দীর সংখ্যা ৬২ জন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়াকে সাধারণত অগ্রাধিকার দেয়া হতো না। কোনো আনুষ্ঠানিক স্থগিতাদেশ না থাকলেও কিছু অঙ্গরাজ্যে এই শাস্তি  বাতিলের পক্ষে সমর্থন গড়ে ওঠেছে। কার্যত স্থগিতই ছিল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৯টি অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ড বৈধ আছে। ১৯৭৬ সালের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে টেক্সাসে, ৫৬১ জন। এর মধ্যে ভার্জিনিয়াতে ১১৩ জন, ওকলাহোমাতে ১১২ জন। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামির সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৩

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।