কোরবানি: ভারতীয় পশু আসতে শুরু করায় দেশের খামারিদের ক্ষতির আশঙ্কা

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   আসন্ন ঈদে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু দেশেই রয়েছে। ফলে এবার কোরবানিতে পশু সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। একই সঙ্গে এবার কোরবানির পশুর দামও সহনীয় থাকতে পারে। তবে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু আসতে শুরু করায় এবং বন্যাদুর্গত এলাকার লোকজন পশুখাদ্য সংকটের কারণে তড়িঘড়ি করে পশু বিক্রি করায় দেশের খামারিরা ক্ষতির শিকার হতে পারেন।

গত বছর কোরবানিতে দেশে পশু জবাই হয়েছিল ১ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে ছাগল-ভেড়া ছিল ৭১ লাখ এবং গরু-মহিষ ৪৪ লাখ। আর এবার দেশে কোরবানির পশু রয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ছাগল-ভেড়া ৭২ লাখ এবং গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার। এছাড়া সরকারি আটটি খামারে উট-দুম্বাসহ আরও সাত হাজার কোরবানির পশু রয়েছে। সবমিলে গত বছরের চেয়ে বেশি সংখ্যক পশু থাকায় এবার চোরাই পথে কোনো পশু না এলেও কোরবানিতে পশুর সংকট হবে না।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, বর্তমান সরকার পশু উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় গত কয়েক বছর গবাদিপশু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে দেশে এবং বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে গরু ও ছাগল উৎপাদনে। অথচ পাঁচ বছর আগেও কোরবানির ঈদে বৈধ-অবৈধ পথে ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে ২০-২৫ লাখ গরু আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণ করা হতো। গত এক বছরে কোরবানির পশুর উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন লাখ। এর মধ্যে গরুর উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ। বর্তমানে দেশে সারা বছরের মাংসের জোগান ও কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রফতানিও শুরু করেছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম  বলেন, এবারের কোরবানিতে পশুর চাহিদা যতই হোক না কেন, তাতে সংকট তৈরি করবে না। কেননা দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ উদ্যোগে গবাদিপশুর উৎপাদন বেড়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় বড় খামার গড়ে উঠেছে।

এসব খামারিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবার যে কোনো মূল্যে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। তাহলে আগামী দিনে দেশে পশু উৎপাদন বাড়বে, নইলে পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না। রাজধানীর মাংস ব্যবসায়ী ও ‘সাফায়েত মাংস বিতানের’ স্বত্বাধিকারী সাফায়েত হোসেন বলেন, ভারত থেকে কিছু গরু না এলে এবার কোরবানিতে গরুর দাম চড়া থাকতে পারে। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা গরু বিক্রি করে দিতে শুরু করায় কোরবানির পশুর দাম কিছুটা কম হতেও পারে।

কোরবানিতে পশুর দাম কমে হতে পারে : বর্তমানে বাজারে ছোট আকৃতির গরু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। মাঝারি আকৃতির গরু ৫৫-৮০ হাজার এবং বড় গরু ৮৫ হাজার থেকে এক-দেড় লাখে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কিছু গরু সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ছোট আকৃতির মহিষ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ হাজার টাকা। মাঝারি আকৃতির মহিষ ৮৫ হাজার থেকে এক-দেড় লাখ এবং বড় মহিষ বিক্রি হচ্ছে দুই-তিন লাখ টাকায়। এছাড়া ছোট খাসি বিক্রি হচ্ছে ৬-১০ হাজার টাকায়। মাঝারি আকৃতির খাসি ১১-২০ হাজার এবং বড় আকৃতির খাসি বিক্রি হচ্ছে ২১-৩০ হাজার টাকায়। তবে এবারের কোরবানি ঈদে গরু-মহিষের দাম ১০ ভাগ কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, এবার ছোট আকৃতির গরুর দাম হতে পারে ৩৫-৪৫ হাজার টাকা। মাঝারি আকৃতির গরু ৫০-৬৫ হাজার টাকা এবং বড় গরু বিক্রি হতে পারে ৭০ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ বা তারও বেশি দামে। অন্যদিকে ছোট আকৃতির মহিষ বিক্রি হতে পারে ৪০-৬০ হাজার টাকায়। মাঝারি আকৃতির মহিষ বিক্রি হতে পারে ৬৫ থেকে এক লাখ টাকায় এবং বড় আকৃতির মহিষ বিক্রি হতে পারে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে খাসির দাম অপরিবর্তিত বা কিছুটা বাড়তেও পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া বাজারে ২-৩ লাখ টাকায় দুম্বা, ৮-১০ লাখ টাকায় উট পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের বাজারে দুম্বা বা উটের দাম অপরিবর্তিত থাকতে পারে বা কিছুটা বাড়তেও পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।