ক্রাইমর্বাতা ডেস্কিরেপাট:  সাতক্ষীরা: জেলায় এবার আষাঢ়ে ঝরেনি কাক্সিক্ষত বৃষ্টি। শ্রাবণের আকাশেও যেনো নেই বৃষ্টি। অনাবৃষ্টির আকাশ থেকে ঝরছে যেনো চৈত্র মাসের কাঠফাটা রোদ। মাঝে মাঝে দুই এক দিন ছিটে-ফোটা বৃষ্টি ঝরলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। এতে করে খরায় পুড়ছে দেশের দক্ষিণ জনপদ। ফলে কৃষকরা বৃষ্টির অভাবে আমনের চারা লাগাতে পারছেন না। পানির অভাবে কৃষকেরা পাট জাগ দিতে পারছে না। পাট পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। পানির অভাবে বিলগুলো খা খা করছে। খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। নদীতেও নেই পানি। কাটা পাটের জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকার কৃষক সোলায়মান খরতায় পুড়ছে দেশের দক্ষিণ জনপদ জেলায় পানির অভাবে আমন চাষে বিঘœ: পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকহোসেন ও আব্দুস সাত্তার বলেন, এমন খরা জীবনে দেখিনি। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। আমনের বীজতলাই তৈরি করতে পারিনি। একই কথা বলেন, বল্লী ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান, ফিংড়ির আব্দুল বারি, হাফিজুল ইসলাম, ধুলিহরের জাহাঙ্গীর কবিরসহ অনেকেই।৭ আগস্ট দুপুরে সদর উপজেলার ফিংড়ি, ধুলিহর, আলিপুর, ভোমরা, শিবপুর, আগরদাড়ি, ঝাউডাঙ্গা, বল¬ী, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, পানির অভাবে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না তারা। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে পানি সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন।
এলাকার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানির অভাবে আমনের আবাদ ও পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। কৃষকেরা আমন চাষাবাদে শ্যালোমেশিন ব্যবহার করছেন। অনেকেই বৈদ্যুতিক মটরপাম্প ব্যবহার করছেন। অনেকেই আবার বোরো ধান উঠার সাথে সাথে মটরপাম্পও ঘরে এনে রেখেছেন। মটরপাম্পগুলো বাড়িতে থাকায় সেগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আমন আবাদ ও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। কৃষকরা আরও জানান, কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পাটের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হয়নি।
ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টি না হওয়ায় নদ-নদী, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ওই পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাঁরা আমনের জমি আবাদ করেছেন, তাঁরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাঁরা কোথাও পানি পাচ্ছেন না। এতে আগাম লাগানো ধানক্ষেতগুলো পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে নষ্ট হচ্ছে। কৃষকেরা ফসল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। সেই সঙ্গে কৃষি বিভাগের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলার ৭টি উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটা, তালা, কলারোয়া ও সদরের ৭৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় আমন চাষে কোমরবেঁধে মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু অনাবৃষ্টি কৃষকদের সে আশায় ছাঁই ঢেলে দিয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক জুলফিকার আলী রিপন বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত গতবারের তুলনা আগাম শুরু হলেও পরিমাণে কম। তিনি আরও বলেন, গত এপ্রিল মাসে জেলায় বৃষ্টিপাতেরর পরিমাণ ছিল ৫৬ মিলিমিটার। মে মাসে ছিল ১০৪ মিলিমিটার, জুন মাসে ২৩৭ মিলিমিটার এবং জুলাই মাসে ১৪২ মিলিমিটার এবং আগস্ট মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন জানান, দেশের অনেক জায়গায় মৌসুমি বৃষ্টিপাত হলেও সাতক্ষীরায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা রোপা আমন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বীজতলা পর্যন্ত তৈরি করতে পারছেন না। পানির অভাবে অনেকস্থানে ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাদের সেচযন্ত্র চালু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চার হাজারেরও বেশি যন্ত্র চালু করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় মোট ৮৭ হাজার ৯০ হেক্টরে রোপা আমন আবাদ করা হয়। এ বছর প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া কলারোয়ায় ১১ হাজার ৬০০, তালায় ৮ হাজার ৩৯০, দেবহাটায় ৫ হাজার ২৮০, কালীগঞ্জে ১৭ হাজার ৩০, আশাশুনিতে ৯ হাজার ২৪০ ও শ্যামনগরে ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টরে আবাদ হয়েছে।
এদিকে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে বলে জানায় কৃষি অফিস। সময় মত প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অধিক তাপমাত্রার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেতে পাটের চারা গজাতে পারেনি। এছাড়া পানি সংকটে পাটজাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে এক লাখ ৪০ হাজার বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সঠিকভাবে পাটজাগ দিতে না পারলে উৎপাদনে ভাটা পড়তে পারে। তবে কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় সূত্র।