আবরার হত্যার বিচার চাইলেন ডাকসুর নেতারা

বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতারা। হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর সোমবার দুপুরে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছুটে যান। তিনি বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অপরদিকে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। তিনি অবশ্য দাবি করেন, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দায় নেই, দায় ব্যক্তির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েট ক্যাম্পাস অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী দেওয়া বক্তব্যে ডাকসু ভিপি বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ড দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের চরম প্রতিফলন। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির শৃঙ্খল ভাঙার জন্য সারা বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

নুরুল হক নুর বলেন, প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলদাস প্রশাসনের মাধ্যমে ভয়ার্ত পরিবেশ কায়েম করা হয়েছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ভয়ে অন্যরা কথা বলতে ভয় পাচ্ছে, একটা প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জোর করে মিছিল-মিটিং করাচ্ছে। তাদের কথা না শুনলে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সর্বশেষ পরিণতি আমরা দেখলাম বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠান বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে। একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে সিঁড়িতে লাশ রাখা হয়েছে।

এ হত্যার বিচার নিয়ে প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে ডাকসু ভিপি বলেন, আমরা একটা কথা বলতে চাই, আপনারা বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস পড়ুন। এই ছাত্র সমাজ জেগেছে। আপনারা সিসিটিভি ফুটেজ যতই সরিয়ে ফেলুন আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে হবে। অন্যথায় আবরার হত্যাকাণ্ড সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠবে।

অপরদিকে, বুয়েটে নির্যাতনে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার দায় ছাত্রলীগের নয়, ব্যক্তির বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সম্প্র্রতি অপসারিত হওয়া ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। সোমবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গোলাম রাব্বানী লিখেছেন, দায়টা কোনোভাবেই সংগঠনের নয়, সংগঠন তো শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হবার দীক্ষা দেয়; সত্য, সুন্দর, ইতিবাচকতা আর মানবিকতার জয়গান গাইতে শেখায়।

দায়টা ব্যক্তি বিশেষের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, তবে পরিতাপের বিষয়, এক মণ দুধে কয়েক ফোঁটা গো-মূত্রের ন্যায় গুটিকয়েক বিপথগামী, প্রতিক্রিয়াশীলদের অপকর্মের দায়ভার পুরো সংগঠনের ওপরই বর্তায়।

নিজেকে আইনের ছাত্র পরিচয় দিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ঘটনা যাই হোক, আইনের ছাত্র হিসেবে এটুকু বুঝি, মার্ডার ক্যান নট বি জাস্টিফাইড বাই এনি মিনস! অপরাধীর একটাই পরিচয়, সে অপরাধী! সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আবরারের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বিকেলে সমকালকে বলেন, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটছে। এখন আবরার হত্যার দায়ভার হল প্রশাসনকে নিতে হবে। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

রোববার রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে চকবাজার থানা পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েক নেতা।

Check Also

উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব: পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।