আগরদাঁড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমীকে পদত্যাগে করতে বাধ্য করার অভিযোগ

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃসদর উপজেলার আগরদাঁড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। গত ০৯ অক্টোবর তিনি সভাপতি বরাবর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং সেটি ১০ অক্টোবর গভর্নিং বডির সভায় গৃহীত হয়েছে। ১৭ অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত হিসাব ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাছে বুঝে দিবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি আগরদাঁড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মাদ্রাসার ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মাদ্রাসার আনুমানিক আয় ৩৫ লাখ টাকা। শুধুমাত্র ২০১৯ সালের মাদ্রাসার জমির ডাক ও লীজ থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। মাদ্রাসার বড় ধরনের কোন ব্যয় এ মুহূর্তে হয়নি। কারণ মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিং দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ অথচ মাদ্রাসার ফান্ডে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার এর বেশি টাকা নেই।
সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগে (এলাকাতে কথিত আছে) ১৪ লাখ টাকা গ্রহণ করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমী। মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের প্রথা বার্ষিক ঈসালে ছওয়াব মাহফিলে অধ্যক্ষ মাদ্রাসার আয় ব্যয়ের হিসাব দেন। কিন্তু আব্দুস সালাম কাসেমী অধ্যক্ষ হওয়ার পরে কোন দিন হিসাব দেননি। সম্প্রতি মাদ্রাসার অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার শর্তে আগরদাঁড়ীর শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে তার স্ত্রীর নিয়োগের জন্য আব্দুস সালাম কাসেমী ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য আরেকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দেন। বর্তমানে নিরাশ ও হতাশ শফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষকে দেয়া ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্রতিনিয়ত মাদ্রাসায় আসা যাওয়া অব্যাহত রেখেছেন।
এছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের ১০ মাসের আটকে যাওয়া বেতন ছাড়ানোর জন্য প্রত্যেক শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে এবং এক অধ্যাপক এর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধারসহ মোট আনুমানিক ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন অথচ আজও সে বেতন ছাড় হয়নি এবং কারও টাকা ফেরত দেননি তিনি। মাদ্রাসার রির্জাভ ফান্ডে এক লাখ টাকা জমা রাখার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ সব টাকা উঠিয়ে নিজের পকেট ভর্তি করেছেন।
মাদ্রাসার হেড মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের সাসপেন্ড থাকাকালীন ফান্ডে বেতনের টাকা জমা হয়েছিলো প্রায় ৪ লাখ টাকা। যা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড প্রত্যাহার হওয়ার সাথে সাথে তাকে ফেরত দেয়ার কথা অথচ হেড মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের সাসপেন্ড প্রত্যাহার হওয়ার পরও তার টাকা ফেরত দেননি এবং জমা হওয়া বেতনের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমী নিজের পকেটে ভরেছেন এবং হেড মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের ৪ লাখ টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করেছেন। মাদ্রাসায় যাতে হেড মুহাদ্দিস রবিউল বাশার এসে টাকা চাইতে না পারে সেজন্য উপরের নির্দেশ আছে মর্মে অজুহাতে হেড মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের বসার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমী। পরবর্তীতে উপরের নির্দেশ কথাটি মিথ্যা প্রমানিত হয় এবং কমিটির সদস্যরা তার বসার কক্ষ উন্মুক্ত করে তাকে বসার জায়গা করে দেন।
মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাসেমী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার মান উন্নয়নে নজর না দিয়ে মাদ্রাসার অর্থের দিকে বেশি ঝুঁকে ছিলেন এবং মাদ্রাসার আয়ের টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা অথচ ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা বলে পকেটে ভরে বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এবং সে টাকার আর কোন হদিস পাওয়া যেতো না। এমনকি মাদ্রাসায় দানের ডিম যা আসতো সেটাও পর্যন্ত বাড়ি নিয়ে যেতেন।
প্রতিটি ব্যয়ের বিলে এবং চেক অনুমোদনে অর্থ কমিটির স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও কোন চেক বা ভাউচারে অর্থ কমিটির অনুমোদন না নিয়ে নিজের ইচ্ছামত ব্যাংক থেকে সভাপতিকে বুঝিয়ে টাকা তুলতেন।
আব্দুস সালাম কাসেমী মাদ্রাসায় মাসে ৩/৪ দিন আসতেন এবং এসে একদিনে এক মাসের স্বাক্ষর করে যেতেন।
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, মাদ্রাসার সকল অর্থ ও দুর্নীতির সাথে গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য জড়িত। তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসার অর্থ ওইসব সদস্যরা ভাগ করে নিতেন। সরকার দলীয় কতিপয় পাতি নেতার হুমকির মুখে মাদ্রাসায় অসহায় ছিলেন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম কসেমী। গভর্নিং সভায় অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম কাসেমী দু’দিন সময় চেয়েছিলেন, কিন্তু ক্ষমতাধর পাতি নেতাদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার আশঙ্কায় তাকে সে সময় দেওয়া হয়নি বলে সূত্র জানায়। এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, মাদ্রাসার এক সদস্য প্রতিনিয়ত বাজার করার থলে নিয়ে মাদ্রায় যেতেন। মাঝে মাঝে তিনি মাদ্রাসার টাকায় ভারত সফর করতেন।
এব্যাপারে আব্দুস সালাম কাসেমীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জ্ঞানত তিনি একটি পয়সাও আমি ও আমার পরিবার খায়নি। সৎ ও সততার সাথে প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাতে আমি মর্মাহত, আমি শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য। সূত্র জানায়, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম কাসেমীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।