সৌদি থেকে গতরাতেও ফিরেছেন ১৭৩ ছোট ভাইকে ছাড়াতে গিয়ে ফিরতে হলো বড় ভাইকেও

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:  একই পরিবারের দুই ভাই নয়ন ও শুক্কু মোল্লা। এর মধ্যে নয়ন চার বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন রংমিস্ত্রির কাজ নিয়ে। গত দুই মাস আগে ছোট ভাই শুক্কুকেও নিয়ে যান তিনি। কাজ দেয়া হয় একই কোম্পানিতে।

ভালই চলছিলো দুই ভাইয়ের। এরই মধ্যে কয়েকদিন আগে শুক্কু যান বাজার করতে আর তখনই সৌদি পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।

এ খবর শুনে ছুটে যান ৪ বছর ধরে সৌদিতে থাকা রংমিস্ত্র বড় ভাই নয়ন। পুলিশ তাকেও আটক করে।

কোন কথাই শোনেনি তারা। তাদেরকে ওই অবস্থায়-ই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে দেশে। নয়ন ও শুক্কুর বাড়ি নড়াইল জেলায়।

শুধু নয়ন বা শুক্কু নয়, সৌদি আরবে ধরপাকড়ের এ ঘটনা এখন নিত্যদিনের। হাটে-ঘাটে-মাঠে, মসজিদে, কর্মক্ষেত্রে কোথাও নিরাপদ নয় দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এমনকি রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলেও তাদের আটক করা হচ্ছে। এই অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছে তারা।

মোটা অঙ্কের ঋণ করে সেদেশে গেছেন অনেকে। কিন্তু একদিকে জোর-জবরদস্তি করে দেশে ফেরত পাঠানো, অন্যদিকে মাথাও ওপর ঋণের বোঝা- এসব ভেবে রীতিমত অসহায়বোধ করছেন স্বল্প সময়ে ফিরে আসা এসব কর্মীরা। এছাড়া দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের নিস্ক্রিয় ভূমিকা, কখনও কখনও উল্টো হুমকি-ধামকিতে তাদের অসহায়ত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ ধরপাকড়ের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন আরও ১৭৩ জন বাংলাদেশি কর্মী। শনিবার রাত সোয়া ১১ টায় সৌদি এয়ারলাইন্স এসভি ৮০৪ বিমান যোগে তারা দেশে ফেরেন। এর আগে শুক্রবার রাতে দেশে ফিরেছিলেন ২০০ জন। এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সৌদি আরব থেকে ৩৭৩ জন বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলো।

একেবারে শূণ্যহাতে ফেরা এসব কর্মীদের গতরাতেও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বিমানবন্দরে জরুরি খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। চলতি বছর প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ফেরত এলো।

গতকাল ফেরত আসাদের মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের দুই ভাই নড়াইলের নয়ন ও শুক্কুর মোল্লা। এর মধ্যে নয়ন চার বছর আগে সৌদি গিয়েছিলেন রংমিস্ত্রির কাজ নিয়ে। মাত্র দুই মাস আগে ছোট ভাই শুক্কুর মোল্লাকে একই কাজে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দু’জনকেই শুণ্য হাতে গতকাল  দেশে ফিরতে হয়েছে।
নয়নের অভিযোগ, ছোট ভাই বাজার করতে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেন। এই খবর শুনে ছুটে যায় তিনি। কিন্তু কোন কথা শুনেনি সে দেশের পুলিশ। তাদের দুই ভাইকেই ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

ভোলার ফুয়াদ হোসেন দু’বছর আগে ছয় লাখ টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসার নামে নিয়ে গিয়েছিলেন  সৌদি। বৈধ আকামা থাকার পরও তাকে কেনো গ্রেপ্তার করা হলো তা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে কথা বললে দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, আপনারা এভাবে আসেন কেনো? যেভাবে আসছেন সেভাবেই সমাধান করেন।

কিশোরগঞ্জের শোয়েব হোসেন দশ বছর ধরে সৌদি আরবে ব্যবসা করে আসছিলেন। তিনি বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক লাখ আশি হাজার রিয়ালের সমপরিমাণ পণ্য সামগ্রী ছিলো, তার আকামার মেয়াদও ছিলো দুই মাস কিন্তু কোনকিছুই তারা  (সৌদি পুলিশ) গ্রাহ্য করেনি। সৌদিতে সব সম্পদ ফেলে শুন্য হাতে দেশে ফিরতে হলো তাকে।

স্বপ্ন ভঙ্গের এমন নানা সব ঘটনা প্রতিদিনই বিমানবন্দরে শুনতে হচ্ছে জানিয়ে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, সাধারণত ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা চলছে অনেকদিন ধরে। এভাবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে অনেকেই ফেরত আসতো। কিন্তু এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও  ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে যারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি। এভাবে গিয়ে লোকজন যেন প্রতারিত না হয় সেটা সবাই মিলে নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের উচিত ফেরত আসার কারণগুলো সুনির্দষ্টভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ প্রতিকার করা।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।