কনটেইনারে ৩৯ লাশ সনাক্ত: মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার শীতল হয়ে মৃত্য

ক্রাইমর্বাতা ডেস্ক রিপোর্ট:  তিনটি লরিতে করে শতাধিক অভিবাসীকে যুক্তরাজ্যে পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি লরি তার সফর সম্পন্ন করেছে। অন্যটির সবাই মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার শীতল কনটেইনারে আটকে পড়ায় জমে লাশ হয়ে গেছে। তদন্তে নিয়োজিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা শনিবার এমন দাবি করেছেন।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিশাল পাচারচক্র জড়িত বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা। এদিকে ট্রেইলারের ভেতরে ৩৯ ব্যক্তির লাশ পাওয়ার ঘটনায় লরি চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। আটক বাকি তিনজনকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। খবর ডেইলি মেইল ও বিবিসির।

বেলজিয়ামের জেব্রুগা বন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের টেমস নদীর পারফ্লিট নদীবন্দরে আসা একটি হিমশীতল ট্রেইলারের ভেতর থেকে বুধবার ভোরে লাশগুলো পাওয়া যায়। ওই দিনই লরির চালক মো. রবিনসনকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। ৩১ জন পুরুষ ও আট নারীর লাশের মধ্যে ভিয়েতনামি লোকজনই বেশি বলে ধারণা পুলিশের।

অনিচ্ছাকৃত মানবহত্যা ছাড়াও রবিনসনের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অভিবাসন ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগও আনা হয়েছে বলে এসেক্স পুলিশের বরাতে জানিয়েছে বিবিসি। উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্রেইগাভেন এলাকার লরেল ড্রাইভ সড়কের বাসিন্দা রবিনসনকে সোমবার চেমসফোর্ডের হাকিম আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শুক্রবার ওয়ারিংটনে এক বাড়ি থেকে জোয়ানা মেহের (৩৮) ও তার স্বামী থমাস (৩৮) এবং স্ট্যানস্ট্যাড বিমানবন্দর থেকে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের এক ব্যক্তিকে (৪৮) আটক করা হয়। তিনজনকেই রোববার জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

এর আগে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন থেকে বিশোর্ধ্ব আরেক ট্রাক চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শনিবার আইরিশ পুলিশ জানিয়েছে। তার ট্রাক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। জেব্রুগা বন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া আরেক চালককেও খুঁজছে বেলজিয়াম পুলিশ। ওই চালক বেলজিয়ামে কনটেইনারটি নিয়ে এসেছিল বলে ধারণা পুলিশের।

প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মার্টিন পাসমোর বলেন, ‘পাচারকারীরা অন্তত ১০০ জন অভিবাসীকে তিনটি লরিতে করে পাচার করছিল। এর মধ্যে বড় ধরনের চক্র জড়িত বলেও সন্দেহ আমার। আমরা এমনটা ধরেই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছি। তবে প্রমাণিত হওয়ার আগে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

পুলিশ জানিয়েছে, সেলমসফোর্ডের ব্রুমফিল্ড হাসপাতালে সবগুলো লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। লাশগুলো সঙ্গে পরিচয় সংক্রান্ত নথিপত্র তেমন না থাকায় তাদের শনাক্তে আঙুলের ছাপ, ডিএনএ ও কাটা দাগ বা ট্যাটুর মতো পরিচয় চিহ্নের ওপর নির্ভর করতে হবে বলে তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

মৃত ওই ৩৯ ব্যক্তিকে শনাক্ত করার উদ্যোগটি ভিয়েতনামি সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা এ মৃতদের প্রথমে চীনের নাগরিক বলে ধারণা করেছিল। এর মধ্যে ভিয়েতনামের থি ত্রা মিও (২৬) ও নগুয়েন দিন লুয়ংয়ের (২০) লাশ রয়েছে বলে ধারনা জোরালো হয়েছে।

মিও মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবা-মায়ের মোবাইলে শেষ বার্তা পাঠিয়েছিল, ‘মা-বাবা, আমার বিদেশযাত্রা ব্যর্থ হয়েছে। আমি মারা যাচ্ছি, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’

ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য পাচারকারীকে ৩০ হাজার পাউন্ড দেয়ার কথাও স্বীকার করেছে তার পরিবার। লুয়ংয়ের বাবা নগুয়েন দিন গিয়া ছেলেকে ব্রিটেন হয়ে ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য পাচারকারীকে ১১ হাজার পাউন্ড দেয়ার কথা জানিয়েছেন। নতুন করে আরও দুই ভিয়েতনামি নাগরিকের নাম সামনে এসেছে।

তারা হলেন আন্না বুই থি নাহাং এবং নগুয়েন দিন লুয়ং। লুয়ং তার স্ত্রী হোয়াং থিকে ১১ হাজার পাউন্ড জোগাড় করে দেয়ার জন্য বলেন। তিনি জার্মানি হয়ে ব্রিটেনে যেতে চেয়েছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে হোয়াং বলেন, ২১ অক্টোবর তার সঙ্গে আমার শেষ যোগাযোগ হয়েছে। ধার নিয়ে আমি তাকে ওই অর্থ দিয়েছিলাম।’

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।