এ ঘটনাকে আপনি ছাত্রলীগের হামলা বলতে পারেন, আমি বলব না: জাবি ভিসি

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:   সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে বাসভবন থেকে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে বের করে আনেন জাবি শাখা ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ ২৫ আহত হয়েছেন বলে খবর জানা গেছে।

এরপর বের হয়ে এসে উপাচার্য এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান।

পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের এই হামলাকে ‘গণঅভ্যূত্থান’ বলে আখ্যা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার জন্যে এটা অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন। এই কারণে যে, কোনো প্রমাণ দেখাতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ এসে আমাকে যথেষ্ট অপদস্থ ও অসম্মান করা হয়েছে। আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সব ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রলীগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা দায়িত্ব নিয়ে আমাকে মুক্ত করেছে। এখন সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সবাই আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি দেশে একটা জাগরণের সময় এসেছে এবার যে, আমরা সত্য কথা বলার কোনো জায়গা পাব কী না? তখনই পাবো যখন মানুষ জেগে উঠবে। আজকে সেই মানুষের জেগে উঠা আমরা দেখেছি।’

আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘এটি গণঅভ্যুত্থান, আমি বলেছি। আমার কোনো নির্দেশে তারা করেনি। যদি হামলা হয়ে থাকে, সেটি প্রক্টর দেখবে।’

তাকে মুক্ত করে আনতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে ভিসি ফারজানা ইসলাম হামলা বলতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, ‘ওদের মধ্যে যা হওয়ার হয়েছে, এটিকে আপনি হামলা বলতে পারেন, আমি বলব না।’

এর পেছনে তিনি যে যুক্তি দেখিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েন, ‘আমার বাড়িতে দুই বছরের শিশু আছে, ৮০ বছরের একজন একজন বৃদ্ধা আছে। আমাদের সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে আমাদের গালিগালাজ করা হয়েছে, ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না, আমরা কেউ বাইরে যেতে পারছি না। এটি হামলার মধ্যে পড়ে না? শুধু শারীরিক ধাক্কাধাক্কি কী হামলা হলো নাকি?’

আন্দোলনের সঙ্গে শিবির যুক্ত হয়ে গেছে বলে দাবি করেন জাবি ভিসি।

তিনি বলেন, ‘ছাত্র হিসেবে ছাত্রলীগ এতোদিন ধরে ধৈর্য রেখেছে। ওরা কিন্তু তখন মাঠে নামেনি। কিন্তু শিবির যখন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে, তখন আমি মনে করি ছাত্রলীগ যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে।’

সাংবাদিকদের ব্রিফিং শেষে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অংশ নেন উপাচার্য। যেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। তার অপসারণ দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে তাকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরতরা।

মঙ্গলবারসহ টানা ১১ দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং দশম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না উপাচার্য।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় আটজন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ‘ধর ধর’, ‘জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে হামলায় উসকানি দিতে দেখা গেছে।

পরে দুপুর ১টার দিকে পুলিশ, শাখা ছাত্রলীগ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া পাহারায় নিজ গাড়িতে করে বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য। তাদের কড়া পাহারায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে নিজ কার্যালয়ে ৭-৮ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। পরে সেখান থেকে নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।