শীর্ষ সন্ত্রাসী সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের বহিস্কারে স্বস্থি

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ: সাতক্ষীরা:    সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল ও সন্ত্রাসী সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিককে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করায় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
সাদিকের বহিস্কারের খবর শোনার পর সাদিক বাহিনীর হাতে নির্যতন ও হয়রানি শিকার হওয়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সাধারণ মানুষকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখে গেছে। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী বিভিন্ন মহলের।
বুধবার সাতক্ষীরা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকসহ জেলার সর্বত্র বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া শোনা গেছে।
সদ্য বিলুপ্ত হওয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা তার ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেছেন ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপাকে এবং বাংলাদশে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি/সম্পাদককে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। একই সাথে অগ্রিম অভিনন্দন আগামীর নেতৃত্বকে।’
সাদিক বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবু জাফর বলে, সাদিক বাহিনীর কারণে সরকারি কলেজের পরিবেশ অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। সাদিক বাহিনীর সন্ত্রাসীরা যখন তখন যে কোন শিক্ষার্থীকে মারধর করতো। কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিত। কিছুদিন আগে এই বাহিনীর সদস্যরা আমার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোন লাভ হয়নি।
সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী টুম্পা (ছদ্ম নাম) বলেছেন, সাদিক বাহিনীর এক সদস্য আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় আমাকে রাস্তাঘাটে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে। এতে করে কলেজে আসা এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সাদিক বহিস্কার হয়েছে এতে খুশি হয়েছি। তার কারণে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। সাদিকসহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবী করছি।
সাতক্ষীরা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মিলন হোসেন বলেন, সাদিক আমাদের কলেজের অনেক ছাত্রকে মেয়ে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই কাজ করতে তারা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতো। জান্নাতুল ফেরদৌস শিমু নামে একটি মেয়েকে দিয়ে বিভিন্ন ছেলের সাথে প্রেম করাতো পরে। ওই মেয়ে ডেটিং করাতো, পরে সাদিক তাদের বাহিনী ফিট করে সেই ছেলে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই কাজে তারা ধনী পরিবারের ছেলেদের টার্গেট করতো। সাদিকের দ্রুত আটক করে শাস্তির দাবী করছি।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মোড় এলাকার একজন ব্যবসায়ী গৌতম দাশ বলেন, সাদিকের কিছু সদস্য এখনও সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাদিকের সাহসে সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে। সরকারি কলেজ মোড়ে বুনো কবির নামে এক ব্যক্তি আসার পর থেকে এই মাদক ব্যবসা বেড়েছে। কবিরসহ তার কিছু সাঙ্গ-পাঙ্গরা সরকারি কলেজ এলাকায় সুদের ব্যবসা, চাঁদাবাজি ছিনতাই, মাদক ব্যবসা করেও আছে বীর দর্পে।
সদ্য বিলুপ্ত হওয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, আমি কোন পাপ করিনি। আমি কখন কোন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে আচরণ করিনি। যা করেছে সাধারণ সম্পাদক সাদিক। সে এবং তার সঙ্গীদের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিষ্ট ছিলো। তবে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তার ফেইসবুকের পোস্ট সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন বলেন, সাদিকের কারণে অনেক অছাত্র সরকারি কলেজের প্রবেশ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে বাজে আচরণ করতো। কোন প্রকার ইজারা না নিয়ে সরকারি কলেজের পুকুর ও ডাব গাছগুলো দখলে রেখেছে জামালসহ কিছু সন্ত্রাসী। প্রশাসনের কাছে দাবী করছি এদের বিরুদ্ধে দ্রুত গ্রহণ করে হোক।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।