জলাবদ্ধতার কবলে সাতক্ষীরা: পরিবেশ বিপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থ ১০ লক্ষ মানুষ

আবু সাইদ বিশ্বাসঃ ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:   সাতক্ষীরা : নাগরিক অধীকার থেকে বঞ্চিত সাতক্ষীরা নিন্ম অঞ্চলের কয়েক লক্ষ মানুষ। বছরের বেশির ভাগ সময়ে পানির মধ্যে তাদের বসবাস। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে জেলাটির প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ ইতোমধ্যে তাদের পেষা পরিবর্তন করেছে। প্রায় চার লক্ষ মানুষ আর্সেনিক,জ্বলোচ্ছাস ও জলাবদ্ধার সাথে সংগ্রাম করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পরিবেশ বিপর্যায়ের কবলে পড়ে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী কয়েকটি সংস্থার জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শুধু সাতক্ষীরা শহরেই লক্ষাধীক মানুষ চলতি শীত মৌসুমেও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তরণের কোন সম্ভবনাও দেখছে না সংশ্লিষ্টরা।
তিনটি কারণে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাতে জলাবদ্ধতা স্থায়ি রূপ নিতে চলেছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পয়োনালা ও এগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার না করা এবং খালে পানি নিষ্কাশিত না হওয়া।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে,১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভা কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণি হিসেবে মর্যাদা পেলেও বর্তমানে পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার যে সুযোগ সুবিধা হওয়ার কথা তা নেই, নেই তেমন নাগরিক সুবিধাও। ৩১.১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ পৌরসভা ০৯ টি ওয়ার্ড ও ৪০টি মহলরা ৫ লক্ষ মানুষ পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা বঞ্চিত।
পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অধিকাংশ পয়োনালা রাস্তার কাছে উঁচু এলাকায় হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার পানি গড়িয়ে যেতে পারে না। অন্যদিকে মোট পয়োনালার এক-পঞ্চমাংশ কাঁচা হওয়ায় সেগুলো দ্রুত মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হয় না। আবার শহরের দেড় কিলোমিটার পয়োনালার জন্য একটি করে কালভার্ট থাকায় সেগুলো দিয়ে পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হয় না।
পৌরসূত্র জানায়, শহরে জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করা। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার কোল ঘেঁষে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার একজনের বাড়ি থেকে অন্যজনের বাড়ির প্রাচীর একই থাকছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ থাকছে না। পয়োনালা নির্মাণ করার জন্য পথ পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ফলে পানি জমে যায়।
এছাড়া শ্যামনগর,কালিগঞ্জ সহ উপকুলীয় অঞ্চল বসবাসের অনুপোযোগী হওয়াতে পৌর এলাকাতে বসবাসের ভীড় পড়ছে। শহরে কাজের বন্ধানে নিন্ম আয়ের মানুষ প্রতিনিয়ত শহরের বিল অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলছে। তুলনা মুলক দাম কম হওয়াতে নিন্ম আয়ের মানুষের পচ্ছন্দের জায়গা শহরের বিল এলাকা। নিয়ম না মেনে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও বসবাড়ি নির্মানের কারণে এসব অঞ্চলে পানি সরানোর তেমন কোন পথ থাকছে না বলে সংশ্লিষ্টদের দাবী।
শহরের ইটাগাছা,কামাল নগর, মুন্সিপাড়া, রথখোলা, উত্তর কাটিয়া, রসুলপুর, বাকাল, পুরাতন সাতক্ষীরা, সুলতানপুর ও খড়িবিল এলাকা এখনো জলাবদ্ধতার কবলে। এসব অঞ্চল এখনো পানির নিচে।
এদিকে সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খাল খননের নামে ‘খালকে ড্রেনে পরিণত করার চক্রান্তের’ অভিযোগ উঠেছে।
প্রাণ সায়রের খনন এলাকা পরিদর্শন করে বাংলাদেশ জাসদ সাতক্ষীরা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সাতক্ষীরা বেতনা ও অন্যান্য নদী এবং বন-পরিবেশ রক্ষা কমিটির আহবায়ক আবুল হোসেন খোকন ও জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ অভিযোগ করেন,সাতক্ষীরা প্রাণ সায়র খালের পূর্বে মাপ ছিলো ৮০ থেকে ১৩০ ফুটের মত। অথচ স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাত্র ৪০/৪৫ ফুট কাটা হচ্ছে। সেখানে খাল না কেটে উল্টো পাশ থেকে মাটি কেটে খালের মধ্যে দিয়ে খালকে ড্রেনে পরিণত করা হচ্ছে। খালের দীর্ঘ করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। আর খালের তলা করা হচ্ছে মাত্র ১০ ফুট। যা একটি ছোট ড্রেন ছাড়া আর কিছুই না। বর্তমানে খাল যে অবস্থায় রয়েছে এই অবস্থাতেই সাতক্ষীরা শহরের সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। আর যদি এই ভাবে খাল বুজিয়ে ছোট ড্রেনে পরিণত করা হয় তাহলে সাতক্ষীরা আগামী বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাবে। তারা বলেন, খাল কাটার নামে খাল বুজিয়ে দেওয়া বন্ধ করে ১৯৬২ সালের ম্যাপ ১৯৯২ সালের মাপ জরিপ অনুযায়ী খাল খনন করা দরকার।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিমও প্রাণ সায়র খাল ভরাট করতে ড্রেন খনন করার অভিযোগ কওে বলেন, পুনঃখননের নামে নদী খালগুলো সংকীর্ণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, এককালের লঞ্চ চলাচলের এই প্রাণসায়র নদী থেকে খাল এবং এবার খাল কেটে ড্রেন বানানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে ডিএস ম্যাপ অনুযায়ী খাল খননের দাবী জানান তিনি।

সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন,‘পৌরবাসীর সেবার লক্ষ্যে আমি কাজ করছি । প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরো জানান,শহরের জলাবদ্ধা নিরশনে সরকারের কাছে বরাদ্ধ চেয়েছি। পর্যাপ্ত বরাদ্ধ পেলে জলাবদ্ধা স্থায়িরূপে নিরাশন করা সম্ভব হবে ।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, প্রাণ সায়র খাল খননে কোন অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেযা হবে না। জলাবদ্ধতা নিরাশনে সরকালী সকল খালের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরো জানান,সাতক্ষীরা জেলাবাসীকে নাগরীক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে কয়েকটি পদ্েক্ষপ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্লীন সাতক্ষীরা গ্রীন সাতক্ষীরা গড়তে সকলের সহযোগীতা চান তিনি।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।