তুমুল বিতর্কের মধ্যেই ভারতে মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব বিল পাস

স্টাফ রিপোর্টার : বিরোধী দলগুলোর প্রবল আপত্তি এবং উত্তর-পূর্বে ব্যাপক বিক্ষোভকে উপেক্ষা করেই ভারতের লোকসভায় পাস হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। গতকাল সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিতর্কিত বিলটি পেশ করেন। ৯০ মিনিট উত্তপ্ত বিতর্কের পর ২৯৩-৮২ ভোটের ব্যবধানে এটি পাস হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিতর্কিত এ বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। আইনে পরিণত হতে হলে বিলটির এখন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে। বিলটি সংসদে পেশের সঙ্গে সঙ্গেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিলের একাধিক অংশ নিয়ে আপত্তি তোলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। বিলটি সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের লক্ষ্য করেই এই বিলটি তৈরি করা হয়েছে।’ অধীর অভিযোগ করে বলেন, ‘বিলটি সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে।’ ওই অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আইনের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
বিলটিকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়। যদিও অমিত শাহ দাবি করেছেন, এই বিল সংখ্যালঘুদের বিরোধী নয়।
অমিত শাহ বলেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের ধর্র্মের উল্লেখ করা হয়েছে। ভারত ভাগের পর, ১৯৫০ সালে নেহরু-লিয়াকত সমঝোতার মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত তাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। তার দাবি, তিন দেশেই হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি, ও খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার হয়েছে। ওই তিন দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই বিল, জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিত শাহ আরও বলেন, কংগ্রেসই ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজন করেছে। এটা ইতিহাস বলছে। আর এখন এটা কংগ্রেসকে শুনতে হবে। তাঁর এই মন্তব্যের পরই লোকসভায় তুমুল হই হট্টগোল শুরু হয়।
এদিকে বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, কেউ বাংলার মানুষকে ছুঁতে পারবে না। সিএবি বা এনআরসি কেউই নয়। আমি এখানে আছি।
এই বিল পাস হলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতে নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবে। বিলটির প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
তারা মনে করছে, এই বিলটি আসলে ১৯৮৫ সালের আমাম চুক্তি বাতিল করার প্রয়াস। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের চুক্তি অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব অবৈধ অভিবাসী এ দেশে শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। আসামের শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলো হুমকি দিয়েছে, বিলটি পাস হলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করবে তারা।
১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনটিতে বলা হয়েছে, অন্য দেশ থেকে ভারতে আসা কোনো ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকত্ব প্রার্থী হন, তা হলে তাকে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এ দেশে বসবাস করছেন এই প্রমাণ দেখাতে হবে। কিন্তু সেই বিধান বদলাতেই আনা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, ভারতে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ৪ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত বিলটি ভারতের মন্ত্রীসভায় অনুমোদন পায়। ১১ ডিসেম্বর সরকার এই বিল রাজ্যসভায় উত্থাপন করতে পারে। বিলটি পাস হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ, যারা ভারতে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও আনন্দবাজার পত্রিকা

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।