সবার নজর সাতক্ষীরা আদালতের দিকে, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাদিকের রিমান্ড শুনানি কাল

ক্রাইমবাতা ডেস্করিপোটঃ   : সাতক্ষীরাবাসীর সবার নজর এখন আদালতের দিকে। জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকের রিমান্ড শুনানি আগামিকাল ২৬ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। গত রবিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাদিককে হাজির করলে বিজ্ঞ বিচারক শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। সদরের একজন জনপ্রতিনিধির দায়েরকৃত পর্ণোগ্রাফী মামলাসহ অস্ত্র ও মাদকসহ মোট ৪টি মামলার শুনানির দিনও ২৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
পুলিশ রিমান্ডে সাদিকের কাছ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে যে অস্ত্র নিয়ে সে পালিয়েছিলো সে অস্ত্র কোথায়, কার কাছে? বিকাশের ছিনতাইকৃত টাকা কোথায়, নারীর ফাঁদ পেতে তৈরীকৃত পর্ণোগ্রাফীগুলো কোথায়, কার কাছে আছে? বেরিয়ে আসতে পারে ঘটনার সাথে জড়িদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয়। আরও বেরিয়ে আসতে পারে কতজনকে তারা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কী পরিমাণ টাকা আদায় করেছে? তাদের আর কী কী পরিকল্পনা ছিলো? জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সাদিক-আকাশ-মনি-শিমু গ্যাংয়ের পুরো টিমের নাম পরিচয় বের করার চেষ্টা করবেন বলে জানান। তবে মামলার অনেক আসামী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদেরকেও গ্রেপ্তারপূর্বক অনুরূপ জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান অনেকেই।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুল ইসলাম সাদিকের বিরুদ্ধে বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই, নারীকে প্রতারণার টোপ হিসেবে ব্যবহার করে সরকারি চাকুরিজীবী ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধি রাজনীতিকসহ অসংখ্য ব্যক্তিকে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ এবং অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সুত্রটি জানান, সাদিক গ্রেপ্তারের সময় ছিনতাইকৃত ২৬ লাখ টাকার মাত্র ৪ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। প্রতারণার উদ্যেশ্যে যেসব ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে পর্ণোগ্রাফী তৈরী করা হয়েছে সেগুলো কোথায় কার কাছে রয়েছে তার অধিকাংশই উদ্ধার করা হয়নি। যে অস্ত্র নিয়ে সাদিক পালিয়েছিল সেই অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।
সূত্রটি আরো জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তাকে সাতক্ষীরায় এনে আদালতে উপস্থাপন করা হলে সে একটি মামলায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে। তাকে আরো ৪টি মামলায় রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। এরমধ্যে আজ ২২ ডিসেম্বর রোববারও একটি মামলায় রিমান্ড শুনানীর দিন ছিল। কিন্তু শুনানীর পর সকল মামলার শুনানীর দিন ২৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে কোট ইনন্সপেক্টরের কার্যালয় সূত্র জানায়।
সূত্র মতে, এই দীর্ঘ সময় পর রিমান্ড শুনানী করে আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হলেও ছিনতাইকৃত টাকা, অস্ত্র এবং পর্ণোগ্রাফীগুলো এই সময়ের মধ্যে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা করেছেন অনেকেই। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার, পর্ণোগ্রাফী উদ্ধার ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সাদিককে গ্রেপ্তারের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ হেফাজতে আনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা না করায় মামলাগুলোর নেপথ্যের তথ্য উদঘাটন এবং আলামত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এদিকে, এক কিশোরীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাদের ডেকে প্রতারণার মাধ্যমে নগ্ন ভিডিও ধারণ করে পর্ণোগ্রাফী তৈরি এবং সেই পর্ণোগ্রাফী ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় টাকা আদায় সিন্ডিকেট সম্পর্কে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ হয়েই চলেছে। এই সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করে জেলার সবকিছু নিয়ন্ত্রণের কথিত রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিরও আপাতত স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন হিংস্র বর্বর প্রকৃতির এই সিন্ডিকেট সদস্য জয়যাত্রা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও আমারএমপিডটকম-এ সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদের অ্যাম্বেসেডর আকাশ ইসলাম একটি ভিডিও’র ঘটনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ডাক্তার মুনসুরকে বলে দেওয়ায় সাইফুল, দীপ ও সাদিক তাকে একটা ঘরে আটকে রেখে উলঙ্গ করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে। গত ১৬ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে আকাশ।
এদিকে, এমপি চাচা’র ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শীর্ষ সন্ত্রাসী সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক বিকাশের টাকা ছিনতাই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছে। এই মামলায় সাদিক আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর বিকাশের টাকা ছিনতাই ও নারীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে ঐ ভিডিওকে টাকা ইনকামের মেশিন বানানোর মামলায় গ্রেপ্তারকৃত শিমু কমপক্ষে ৮জনের নাম প্রকাশ করেছে। এই ৮জনের মধ্যে জয়যাত্রা টেলিভিশনের আকাশ, অন্তর মাল্টিমিডিয়ার তুহিন, সংগ্রাম টাওয়ারের তুহিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনি, সাদিকের পাতানো চাচা মিলন, দীপ ও রুমনের নাম রয়েছে। শিমু এই মামলার বাদী ছাড়াও আরো ৩/৪ জনের সাথে সে মেলামেশা করে গোপন ডিভাইসে ভিডিও করে তা সাদিকের কাছে এনে দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
যদিও সূত্রমতে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি এই চক্রের পাল্লায় পড়ে অর্থ সম্পদ খুইয়েছে। আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছিলেন শিমু ছাড়াও আরো ৬জন নারীকে ব্যবহারের কথা। তবে, প্রতারণার টোপ হিসেবে ব্যবহারকৃত নারীর সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। সেই নারীরা সনাক্ত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।