৫ কারণে সালমান শাহর ‘আত্মহত্যা’: পিবিআই

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  ঢাকাই সিনেমার সর্বকালের জনপ্রিয় নায়কদের একজন সালমান শাহকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তার আত্মহত্যার পেছনে ৫টি কারণ খুঁজে পেয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সালমান শাহ হত্যার নেপথ্যের কারণগুলো তুলে ধরেন পিবিআইয়ের মহাপরিচালক ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

ডিআইজি বনজ কুমার বলেন, চিত্রনায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছেন বলে দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে আজ ওই তদন্তের বিষয়ে জানানো হয়। সেখানে নায়ক সালমানের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে-

১. সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা;

২. স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সালমানের দাম্পত্য কলহ;

৩. সালমান শাহর মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা এবং একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়া বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা;

৪. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা এবং জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জিভূত অভিমানে রূপ নেয়া;

৫. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতা।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘পিবিআইয়ের তদন্তে সালমান শাহকে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’

প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তুলে ধরে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পিবিআই কর্তৃক তদন্তকালে ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৪৪ সাক্ষীর জবানবান্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে সালমান শাহর। স্মার্টনেস-গ্লামার ও পারসোনালিটির কারণে রাতারাতি তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত হয়ে ওঠেন এ নায়ক। মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবি করেন। যার অধিকাংশই সুপারহিট। মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বেঁধে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখলেও সালমানের বেশিরভাগ ছবির নায়িকা শাবনূর। এই জুটি তখন এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, যে কোনো ছবি মুক্তি পেলেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। একপর্যায়ে শাবনূরের সঙ্গে বিবাহিত সালমানের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। এর পর কলহ দেখা দেয় সালমানের পরিবারে।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমানের মৃত্যু হয়। সেই থেকে তার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। হত্যা নাকি আত্মহত্যা? অবশেষে পিবিআই জানাল, আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমানের রহস্যজনক মৃত্যুর পর এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন।

২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়। প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তাতেও সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলাটি এর পর র্যা ব তদন্ত করে। তবে র্যা বের দ্বারা তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যা বকে মামলাটি আর না তদন্ত করার আদেশ দেন। তার পর মামলাটির তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে।

দীর্ঘ তদন্তের পর সোমবার পিবিআই জানাল সালমানকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।