‘ডিসি অফিসে নিয়ে সাংবাদিক আরিফকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়’

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে শুক্রবার (১৩ মার্চ) গভীর রাতে বাসার গেট ও ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়েছে। সে নির্যাতনের ঘটনার পুরো দৃশ্য ভিডিও করে একজন।  শনিবার (১৪ মার্চ) কুড়িগ্রাম কারাগারে আটক আরিফের সঙ্গে দেখা করতে গেলে স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুর কাছে এসব অভিযোগ করেছেন তিনি (আরিফ)। এসময় রাতের ঘটনায় নেতৃত্ব দানকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনকে চিনে ফেলেন নিতু। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনই তার বাসায় হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম কারাগারে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে যান তার স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু। সেখানে আরিফুল ইসলাম স্ত্রীকে জানান, মধ্যরাতে তাকে বাসা থেকে জোর করে তুলে আনার পথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত লাথি-থাপ্পর, ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্যান্ট ও গেঞ্জি খুলে তাকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এসব দৃশ্য ভিডিও করা হয় বলে জানিয়েছেন আরিফুল। তিনি আরও জানান, যারা তাকে নির্যাতন করেছে, তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তাদের দেখতে না পারলেও তাদের সবার গলার স্বর তার মনে আছে।

মোস্তারিমা সরদার নিতু আরও জানান, ‘আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলার মতো শক্তি ছিল না তার।’

তিনি আরও জানান, ‘শুক্রবার রাতের অভিযানে আরডিসি নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। তাকে চিনতে পেরে সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করি। ওই সময় ওই কর্মকর্তা আমাকে জানান, আমার স্বামী মাদকসেবী, এটা তাদের কাছে প্রমাণ আছে। আমি এর প্রমাণ দাবি করলে তিনি তড়িঘড়ি করে চেয়ার থেকে উঠে চলে যান।’

আরডিসি নাজিম উদ্দিন অভিযানে থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি গতরাতে ওয়ার্ক স্টেশনে ছিলাম না।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এসময় তার বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। যদিও আরিফ অধূমপায়ী।

আরিফের স্ত্রী কাছে দাবি করেন, মধ্যরাতে কিছু আগন্তুক তাদের বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকেন ও দরজা খুলতে বলেন। আরিফ তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিচয় দেননি। এরপর আরিফ কুড়িগ্রাম থানায় যোগাযোগ করলে থানা কর্তৃপক্ষ তার বাসায় কোনও অভিযান চালানো হয়নি বলে নিশ্চিত করে। এরমধ্যেই আগন্তুকরা দরজা ভেঙে তার বাসায় প্রবেশ করে। তবে তারা কোনও তল্লাশি অভিযান চালায়নি। আরিফের স্ত্রীর দাবি, আগন্তুকরা ছিল ৬ থেকে ৭ জন। সবাই সশস্ত্র ছিল। তাদের সঙ্গে ১৫-১৬ জন আনসার সদস্য ছিল। তারা বাসায় ঢুকেই কোন কারণ না জানিয়ে আরিফকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। এসময় কয়েকবার গুলি করার হুমকিও দেয় আগন্তুকরা। এর এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে খুঁজে পায়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আরিফকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ডিসি অফিসে জানতে চাইলে কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। যদিও আরিফ অধূমপায়ী এবং জীবনেও এসব ছুঁয়েও দেখেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়। তবে এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।